জন্মের পরেই নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার শিশু হামদান - দৈনিকশিক্ষা

জন্মের পরেই নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার শিশু হামদান

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

জন্মের পর শিশুকে পরম মমতায় আগলে রেখে কোলেপিঠে করে মানুষ করেন মা-বাবা। মায়ের বুকের দুধ খেয়েই বেড়ে ওঠে অধিকাংশ শিশু। কিন্তু সেই ভাগ্য হয়নি রিয়াদুস সালেহীন ওরফে হামদানের। জন্মের পরেই নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার হয় শিশুটি। গর্ভে থাকা অবস্থায় তাকে হালিমা নামে এক নারীকে দিয়ে দেওয়ার মৌখিক চুক্তি করেন শিশুটির দরিদ্র মা হাসিনা বেগম ও বাবা সোহেল। হাসপাতালের শয্যা থেকেই হামদানকে নিয়ে যান হালিমা। তার উদ্দেশ্য ছিল হামদানকে নিজেদের ঔরসজাত সন্তান পরিচয় দিয়ে বিত্তবান স্বামীর সম্পত্তি হাত করা। সচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠায় ভালোই কাটছিল হামদানের দিন। কিন্তু যখন তার বয়স সাত মাস তখন হালিমার স্বামী দেলোয়ার জানতে পারেন হামদান তার ঔরসজাত সন্তান নয়। এর পরই আরেক নির্মমতার মুখোমুখি হয় শিশুটি। স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেলোয়ার পুলিশের কাছে যান হামদানের প্রকৃত জন্মপরিচয় বের করার জন্য। অবশেষে ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানা পুলিশ গত রবিবার বগুড়ার শান্তাহার উপজেলা থেকে খুঁজে বের করে হামদানের প্রকৃত মা হাসিনা বেগম ও বাবা সোহেলকে। গতকাল সোমবার তাদের কাছে বুঝিয়েও দেওয়া হয় শিশুটিকে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামদানকে যখন তার প্রকৃত মা-বাবা হাসিনা-সোহেল দম্পতির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তখন এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতদিন মা হিসেবে যার কোলে ছিল হামদান, সেই হালিমার গলা কোনোভাবেই ছাড়ছিল না। তার প্রকৃত মা হাসিনা কোলে নিতে গেলেই কান্না করতে থাকে। এ সময় পালিত মা হালিমাও নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি, ছেলে হামদানকে জড়িয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলছিলেন আর বলছিলেন, ‘যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস বাবা।’ এমন পরিস্থতির মধ্য দিয়েই অবশেষে হামদানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাসিনা-সোহেল দম্পতির কাছে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হালিমা বেগম নওগাঁর তমিজ উদ্দিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক নার্সের মাধ্যমে শিশু হামদানকে তার মায়ের কাছ থেকে নিতে সক্ষম হন। হামদানের প্রকৃত মা হাসিনা বেগম শারীরিকভাবে নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার সুযোগ নিয়েছিলেন ওই নার্স ও হালিমা।’

তিনি আরও বলেন, ‘হালিমা বেগমের স্বামী দেলোয়ার হোসেন সাভার মডেল থানায় মৌখিক অভিযোগ করার পর আমরা দ্রুত সময়ে হামদানের প্রকৃত মা-বাবাকে খুঁজে বের করি। সন্তানকে ফিরে পেয়ে তারা খুশি হয়েছেন। যেহেতু আমাদের হাত ধরে শিশু হামদান তার মা-বাবাকে ফিরে পেয়েছে সেহেতু আমরা সার্বক্ষণিক তার খোঁজখবর রাখব।’

ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর সাভারের তালবাগের বাসিন্দা এইচএম দেলোয়ার হোসেন (৬৩) তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর হালিমা বেগমকে (৪১) বিধবা জেনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে হালিমা তার মায়ের বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর যাওয়া-আসা করতেন। বিয়ের তিন মাস পর তিনি তার মায়ের বাড়িতে অবস্থানকালে স্বামী দেলোয়ারকে জানান যে, তিনি সন্তানসম্ভবা। গত বছর ৪ অক্টোবর তার মায়ের বাড়িতে ছেলেসন্তান ভূমিষ্ঠ হয় বলে স্বামী দেলোয়ারকে জানান হালিমা। সন্তানের নাম রাখেন রিয়াদুস সালেহীন ওরফে হামদান। গত বছর ৭ অক্টোবর ছেলে হামদানকে নিয়ে একাই স্বামীর বাড়ি সাভার থানাধীন তালবাগে ফিরে আসেন। 

পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেলোয়ারের প্রথম স্ত্রীর তিন মেয়ে রয়েছে, কোনো ছেলেসন্তান নেই। সাভারে তার অনেক সম্পত্তিও রয়েছে। একটি ছেলে সন্তানের আশায় বৃদ্ধ বয়সে হালিমাকে বিয়ে করেন তিনি। মূলত এই ছেলেসন্তানের মাধ্যমে হালিমা তার স্বামীর সম্পত্তির ভাগ নিতে চেয়েছিলেন। ফলে অন্যের সন্তানকে তার স্বামীর ঔরসজাত সন্তান হিসেবে পরিচিত করেন। কিন্তু হামদান একটু বড় হলে তার চেহারা লক্ষ করে দেলোয়ারের মনে সন্দেহ জাগে এ সন্তান তার ঔরসের সন্তান নয়। একপর্যায়ে দেলোয়ার নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হালিমা স্বীকার করেন হামদান তার গর্ভের সন্তান নয়। তিনি শিশুটিকে কৌশলে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের একটি ক্লিনিক থেকে এনেছেন। এরপর দেলোয়ার গত ১২ মে স্ত্রী হালিমাকে তালাক দেন এবং বিষয়টি সাভার মডেল থানা পুলিশকে জানান।

অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, শিশু হামদানের আসল মা-বাবা বগুড়া জেলার শান্তাহার উপজেলা এলাকায় বসবাস করছেন। তার বাবা একটি ধানের চাতালে শ্রমিকের কাজ করেন। পরে বগুড়া জেলা পুলিশের সহায়তায় সাভার মডেল থানা পুলিশ সেখানে পৌঁছে হামদানের আসল মা-বাবাকে নিয়ে আসে।

হামদানের প্রকৃত মা হাসিনা ও বাবা সোহেল জানিয়েছেন, হতদরিদ্র, অসচ্ছল ও অসহায় বিধায় শিশুটিকে তারা হালিমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মা হাসিনা কান্নাকাটি করলেও হালিমার কোনো সন্ধান পাননি তারা।

শিশু হামদানের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার ডায়াবেটিস, হার্ট ও কিডনির সমস্যা। পিত্তথলিতে পাথর, আমি কোনো কিছু করতে পারি না। অসুস্থ থাকার কারণে বাচ্চা পালন করতে পারব না বলে আপাকে (হালিমা বেগম) দিয়ে দিছি। ওই আপা আমাকে বলেছে সে ভালোভাবে মানুষ করবে, হাফেজ বানাবে।’ বাবা সোহেল বলেন, ‘আল্ট্রাসনো করতে গিয়ে ওই নারীর (হালিমা) সঙ্গে পরিচয়। আমার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় আমরা স্বেচ্ছায় বাচ্চা দিয়েছিলাম। আমরা ভুল করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার আরও এক ছেলে ও মেয়ে আছে। আমার বড় ছেলে সৌদিতে অ্যাকসিডেন্ট করেছে, সে খুবই অসুস্থ। এরপর থেকেই ওর মা এই ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে।’

পালক মা হালিমা বেগম বলেন, ‘আমি বাচ্চার জন্য একটা ক্লিনিকে বলে রাখছিলাম, কেউ যদি বাচ্চা দান করে তাহলে আমাকে বইলেন। ওই ক্লিনিকের মানুষরা আমাকে ফোন করে এ বাবুটার খোঁজ দিছে। এরপর ওই বাবুটার বাবা-মাকে ফোন করলে তারা বলে, মা অসুস্থ। অনেক সমস্যা, আর্থিক অবস্থাও খারাপ, বাচ্চা মানুষ করার মতো ক্ষমতা ওনাদের নাই। কেউ নিয়ে মানুষ করলে দিয়ে দেবে, তখন আমি নেই।’

কোনো টাকাপয়সা দিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে হালিমা বেগম বলেন, ‘সিজার ও ওষুধের টাকা আমি দিছিলাম। আর হাতে ৫ হাজার টাকা দিছিলাম পরবর্তী সময়ে ওষুধ খাওয়ার জন্য। নার্সকে কিছু বকশিশ দিছিলাম।’

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.018024921417236