দৈনিক শিক্ষাডটকম, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এলো আরেক শিক্ষকের কাণ্ড। যৌন হয়রানির অভিযোগ তুললেন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের এক শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অনৈতিকভাবে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ বিভাগীয় প্রধানের দিকে।
এ নিয়ে তিন বছরে দুই তদন্ত কমিটির কাছে তিনবার সাক্ষাৎকার দিলেও অজানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি প্রতিবেদন। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুতে যেন একের পর এক বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। অবন্তিকার আগে অঙ্কন, এরও আগের ঘটনা ছদ্দ নাম মিতার। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধানের কাণ্ড উঠে এসেছে।
জানা যায়, মিতা। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অবন্তিকার ঘটনার পর নিজের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানি নিয়ে মুখ খোলেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে নিজের প্রোডাকশন হাউজে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার একই শিক্ষকের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, নিজেকে কিভাবে নিরাপদ করে আবার ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনেছি, তা বলতে পারবো না। তার আক্রোশ থেকে আমি বের হতে পারিনি। ক্লাশে তার কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট আমি যখন বিভাগে সাবমিট করতে যাই, তখনও তিনি আমাকে স্পর্শ করেছেন।
এমন কী অভিযোগের তীর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিমের দিকেও। এ শিক্ষার্থী দাবি করেন, অনৈতিকভাবে দুইবার ফেল করানো হয়েছে তাকে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমাকে ৫০ এর মধ্যে ৩ নাম্বার দেয়া হয়। শুধুমাত্র আমি শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত ছিলাম, সেটার জন্য দেয়া হয়েছে। এরপরের পরীক্ষাগুলোতে আমাকে ফেল করিয়ে দেয়া হয়, ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দে লিখিত অভিযোগ দিলেও তিন বছরে কোনো লাভ হয়নি। উল্টো দুই তদন্ত কমিটির কাছে তিনবার দিতে হয়েছে সাক্ষাৎকার। তবে তদন্ত ঠেকাতে হাইকোর্টে গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি অভিযুক্ত শিক্ষক।
এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় শিক্ষক ইমনের সঙ্গে। যদিও বিষয়টি বানোয়াট বলে দাবি তার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক প্রভাষক ইমন ফোনে বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের একটা মিথ্যা ঘটনা দিয়ে, এই মেয়েটি অভিযোগ করছিল, তার অভিযোগ মিথ্যা, মিথ্যা রটনা রটাচ্ছে। এটা আমার নজরে এসেছে। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করবো। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মণ্ডলি ও তদন্ত কমিটি আছে, তাদের আমি অবগত করছি, এটা একটা মিথ্যাচার।
বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের কাছে গেলে তিনি বলেন, সবই তার জানা তবে বিশ্ববিদ্যারয় বন্ধের মারপ্যাঁচে করা হয়ে ওঠেনি তদন্ত।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম আরও বলেন, প্রতিটি কেস আমি দেখছি এবং যে অভিযুক্ত শিক্ষক, তার কাছ থেকে যা যা কাগজপত্র পাওয়া গেছে সে নিয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল, এখন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।
প্রসঙ্গত: শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে (আম্মান সিদ্দিকী) দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দেন ফাইরুজ অবন্তিকা। এরপর ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এরপর থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।