শেখ হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাঁটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমরা ম্যুরাল বা নাম ফলক স্থাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি মেনে নেবো না। স্মৃতি রক্ষার্থে নাম ফলক থাকবে, কিন্তু কোন স্কেচ বা ছবি নয়।
মঙ্গলবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান শিক্ষার্ধীরা। ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আজ বুধবার এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণস্বাক্ষর নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ জমা দেয়ার ঘোষণাও দেন তারা। এছাড়া দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় ১১ ফুট দৈর্ঘ্যের ম্যুরাল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বলতে চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খালেদার জিয়ার অবদান আমরাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমরা চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই তার কোনো স্মৃতি থাকুক। ফ্যাসিবাদ আমলে তার নামের যে নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে সেটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই হতে পারে তার স্মৃতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনের আগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রক্টর বলেন, প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছোট নাম ফলক হবে, মূর্তির মত কিছু থাকবে না। যার স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হচ্ছে, তিনি যদি জানেন, তার একটি স্মৃতি ফলক স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই তিনি নিজে কষ্ট পাবেন।
ম্যুরাল স্থাপনের বিষয়ে জবির শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যুরাল সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এটা কোন ম্যুরাল নয়। শুধু ছবি সম্বলিত নাম ফলক।
একই কমিটির সদস্য ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন ফেসবুকে লেখেন, নামফলক আর ম্যুরাল এক জিনিস নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার স্বীকৃতি হিসেবে নামফলক থাকা দরকার। আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন কোনো ম্যুরাল জবি ক্যাম্পাসে স্থাপন করবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে চেনানোর জন্য নামই যথেষ্ট, নামফলকের পাশে ছবির কোনো প্রয়োজন নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এটা কোন মুর্যাল বা ভাস্কর্য নয়। এটা ছবি সম্বলিত ঘোষণা ফলক।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসেবে রুপদান করে ততকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার। তার একটি নামফলক ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। হাসিনা সরকারের আমলে তা ভেঙে ফেলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। নতুন নামফলক স্থাপন করে তা ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উদ্বোধন ঘোষণা দেন তিনি।