অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশ বিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তরে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন হচ্ছে।
সোমবার সংসদের বৈঠকে 'ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল–২০২৩' উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর আগে সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলে বলা হয়েছে, ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনো ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ কারো কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণ সংবলিত কোনো দলিলে স্বাক্ষর করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনো অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই। এ ছাড়া প্রতারণামূলক ভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনো মালিকানা বা দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নামে স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টিন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি ওই জমি বিক্রি, দান বা হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল নিবন্ধন করতে পারবেন না।
এতে আরও হয়েছে, কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া আবাদযোগ্য জমির উপরি–স্তর কাটলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। যদি কোন ব্যক্তি এই আইনে বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচনা দেয় তাহলে মূল অপরাধীর সমান দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এই আইন করা হচ্ছে। নাগরিকদের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা লক্ষ্যে উক্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ভূমি হতে বেআইনি দখল, স্থাপনা বা প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং উক্ত ভূমিকে এর পূর্বের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সন্নিবেশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত গ্রহণসহ অংশীজনের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে প্রস্তাবিত 'ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩' প্রণয়ন করা হয়েছে।
বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সংশোধন : ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না এমন বিধান রেখে 'বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা' আইনের সংশোধন হচ্ছে। এ জন্য সোমবার জাতীয় সংসদে একটি বিল আনা হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী 'বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিল–২০২৩' জাতীয় সংসদে তোলেন। বিদ্যমান আইনে কৃষি জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা সম্পর্কিত কোনো বিধি নিষেধ ছিল না।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না যদি তা উর্বর কৃষি জমি হয় বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হয় বা কৃষি জমির উর্বর উপরিভাগের মাটি হলে বা পরিবেশ প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্রের ক্ষতি সাধিত হয় বা ড্রেজারের মাধ্যমে বা যদি অন্য কোনো কৌশলী প্রক্রিয়ায় বালু বা মাটি উত্তোলন করা হয় যাতে এই জমিসহ পাশ্ববর্তী অন্য জমির ক্ষতি, চ্যুতি বা ধসের উদ্ভব হয়।
৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমির মালাকানা নয় : ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ল্যান্ড রিফর্মস অর্ডিন্যান্স রহিত করে ভূমি সংস্কার আইন করা হচ্ছে। সোমবার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ সংক্রান্ত বিলটি সংসদে তোলেন।
বিলে বলা হয়েছে, ৬০ প্রমিত বিঘার বেশি কৃষি ভূমির মালিক বা তার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষি ভূমি অর্জন করতে পারবে না। তবে আটটি ক্ষেত্রে এটি শিথীল থাকবে। পরে বিলটি পরীক্ষা করে দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।