কয়েক দফা বিলম্বের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অবশেষে গাজা প্রস্তাব পাস হলো।গতকাল শুক্রবার প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাস হয়। প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫ দেশের মধ্যে ১৩টি প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিলেও; ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
প্রস্তাবটির খসড়ায় গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে যুদ্ধবিরতি কথাটি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে শুধু মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে ঝুলে থাকার পর প্রস্তাবটি পাস হলেও; এতে যুদ্ধ থামানোর কথা না বলায় এর মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ভোট না দিলেও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস বলেছেন, ‘প্রস্তাবটি অগ্রগতির পথে একটি শক্ত পদক্ষেপ।’
আর নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য রাশিয়া বলেছে, এই প্রস্তাব একটি ‘দন্তহীন’ ও ‘অক্ষম’ প্রস্তাব। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নিবানজিয়া বলেছেন, এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে বলা হয়নি। এর বদলে এটির মাধ্যমে ‘মুক্ত হস্তে’ ইসরায়েলকে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
পাসকৃত প্রস্তাবটিতে যা বলা হয়েছে-
# সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কাছে বাধাহীনভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে।
# একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির অবস্থা তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
# ত্রাণ সরবরাহের জন্য যত পথ আছে তার সবগুলো ব্যবহার উপযোগী করে দিতে হবে।
# জাতিসংঘের প্রধানের প্রতি একজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যিনি ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি দেখবেন।
# জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
# মানবিক সহায়তা পূরণে গাজায় পর্যাপ্ত জ্বালানি প্রবেশ করার দাবি জানানো হয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘাত নিয়ে এর আগেও নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব তোলা হয়েছে। তবে একটিও পাস হয়নি। এর মধ্যে সর্বশেষ প্রস্তাবে উপত্যকাটিতে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেবারও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ১৩ সদস্য। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করায় তা খারিজ হয়ে যায়। আর ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় এ পর্যন্ত উপত্যকাটির ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ হাজার শিশু ও ৬ হাজার ২০০ জন নারী। এ ছাড়া খাবার, পানি ও জ্বালানির অভাবে চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন গাজার বাসিন্দারা।