শপথ নেয়ার পরদিন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য উপদেষ্টারা। শুক্রবার সকাল ১০টার কিছু আগে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তার আগে হেলিকপ্টারে করে সাভার পৌঁছান ড. ইউনূস।
প্রথমে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অন্য উপদেষ্টারা।
এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বিউগলে বেজে ওঠে করুন সুর।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাখা শোকবইয়ে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা। স্মৃতিসৌধ থেকে তাঁর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয় শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের পাশাপাশি থাকছেন আরও ১৬ জন উপদেষ্টা। তবে ঢাকায় না থাকায় ৩ জন উপদেষ্টা এদিন শপথ নিতে পারেননি।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে সাম্প্রতিক ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে এ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশকর্মী ও আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদে আরও থাকছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ফরিদা আখতার, , হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আ.ফ.ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরজাহান বেগম এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক শারমিন মুরশিদ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদিপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় এবং মুক্তিযোদ্ধা ফারুকী আযম ঢাকায় না থাকায় তারা শপথ নিতে পারেননি।
শপথ গ্রহণ শেষে ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, 'অরাজকতার বিষবাষ্প এখন যে-ই ছড়াবে বিজয়ী ছাত্র-জনতাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ শক্তি তাকে ব্যর্থ করে দেবে।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন উৎসবের মুহূর্তে এ স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে একটি অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। অরাজকতা আমাদের শত্রু। একে দ্রুত পরাজিত করতে হবে।'
গত ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত তিনদিন দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। ফলে ঢাকাসহ সারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশজুড়ে সহিংসতায় অনেকেই মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।