দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি: জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ আন্দোলনকারীদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় বাঁধা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’। এছাড়া, এ ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবধরনের দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
আন্দোলনকারীদের ৫ দফা দাবিগুলো হলো- জাবিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা, নিপীড়নের ঘটনায় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের অপরাধ তদন্ত করা এবং তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া, যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত পাবলিক হেল্থ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করা এবং ক্যাম্পাসে মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ধর্ষণেরর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষনিকভাবেই ধর্ষক মোস্তাফিজকে মীর মোশাররফ হোসেন হলে ঘেরাও করে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী চলমান আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীগণ তার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে নিয়ে 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ' গঠন করে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উৎখাত ও মাদক সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানায়।’
যৌন নিপীড়ক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার ও ধর্ষণকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এবং মীর মোশাররফ হোসেন হলের প্রোভোস্টের সম্পৃক্ততার তদন্তে প্রশাসনের গাফিলতি আছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহকারী কিছু ব্যক্তিকে আটক করা হলেও মাদক বিপণন ও ব্যবসার সাথে যুক্ত ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে থাকা কোন ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে দেখা যায়নি। যৌন নিপীড়ক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার ও ধর্ষণকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এবং মীর মোশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের সম্পৃক্ততা তদন্তের দাবিতেও প্রশাসনের আশ্বাসকে সন্দেহের মুখে ফেলে দেয়। এছাড়াও দেশের বিশেষ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়নের বার্তায় উঠে আসা ক্যাম্পাসে বিদ্যমান মাদক ও অপরাধ চক্রের ভয়াবহ বিস্তারের বর্ণনাও প্রশাসনকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারেনি।’
আসন্ন ২২ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা কোনোভাবে বাধাগ্রস্থ হলে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে উল্লেখ করে মাহফুজ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আয়োজন ও চলমান আন্দোলনের দাবিসমূহ বাস্তবায়নে প্রশাসন যদি গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তবে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ আরো ব্যাপক ও কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং এই উদ্দেশ্যে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের যেকোনো প্রকার গড়িমসি যদি আমাদের কঠোরতর আন্দোলনে যেতে বাধ্য করে এবং ফলশ্রুতিতে আসন্ন ২২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন কোনোভাবে বাধাগ্রস্থ হয় তবে তার সম্পূর্ণ দায় একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালণায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।