দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয়জন এবং নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থীদের চারজন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত চারজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সন্তান বলে জানা গেছে। উতোমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষার রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালকের নির্দেশে কুড়িগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এবং লটারির ফল পাশ কাটিয়ে প্রধান শিক্ষিকা জিয়াসমিন আরা হক টাকার বিনিময়ে একক সিদ্ধান্তে ওই সাতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি প্রতি বছর এমন কাজ করলেও বিষয়টি এবার প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছর ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের সাথে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনা আদালতেও গড়ায়।
স্কুলের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র শিক্ষক মফিদুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী লটারির বাইরের কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা যাবে না। কিন্তু, এসব শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনলাইনে কোনো আবেদন করেননি। প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে ওই সাত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছেন।
ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র শিক্ষক দেওয়ান এনামুল হক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, শ্রেণি উপকমিটিকে ওই সাত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে বলেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়টির সিনিয়র শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভর্তি হওয়া চার শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চার শিক্ষকের সন্তান। তারা প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করে ভর্তির সুযোগ নেন। লিখিত আবেদনে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোটার কথা উল্লেখ করলেও সে কোটাতেও তাদের সন্তানরা স্থান পায়নি। ওই কোটা আগেই পূরণ হয়েছে। সহোদর কোটায় দুজন এবং যমজ কোটায় একজন ভর্তির আবেদন করেছিলো প্রধান শিক্ষকের কাছে। অনলাইনে তাদের কোনো আবেদন নেই।
প্রসঙ্গত, সরকারি স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের সন্তান ভর্তি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছিলো, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারীদের ভর্তির উপযুক্ত সন্তান সংখ্যার সমসংখ্যক আসন ওই প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত থাকবে। এক্ষেত্রে তাঁদের অনলাইনে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারী সরকারি মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে এবং তাঁর ভর্তি উপযুক্ত সন্তান বালিকা হলে কাছের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। একইভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকা বা কর্মচারী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে এবং তার ভর্তি উপযুক্ত সন্তান বালক হলে নিকটতম সরকারি বালক বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। তবে সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সন্তানদের ভর্তির জন্য কোনো কোটা সুবিধার কথা ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেনি অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, লটারির ফলের বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। সরকারি কলেজের শিক্ষকের সন্তান হলেও তাদেরকে অনলাইনে আবেদন করে লটারিতে অংশ নিয়ে টিকতে হবে। এমনকি কোটাভুক্ত হলেও লটারিতে টিকতে হবে। এর বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা পরিপন্থি। ওই সাত শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন না করেই কিভাবে ভর্তির সুযোগ পেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব যাচাই করে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পর্কে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কোনো প্রকার অর্নৈতিক লেনদেন ছিলো না। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। ওই সাত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। শূন্য আসনে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।