অবশেষে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মরত চার শতাধিক জাল শিক্ষকের বেতন বন্ধ করলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত মে মাসে তাদের বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও আগস্ট মাস থেকে (জুলাইয়ের এমপিও) তা কার্যকর করা সম্ভব হলো। এর আগে জাল শিক্ষকরা মে ও জুন মাসে বেতন ও ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা পেয়েছিলেন।
গতকাল বুধবার জুলাই মাসের এমপিওর চেক ছাড় হলে দেখা গেছে, জাল শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। এবার তাদের কাছে এমপিও বাবদ নেয়া সব টাকা ফেরত চাইবে সরকার। যিনি ফেরত দেবেন না তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
জানা গেছে, সহস্রাধিক জাল শিক্ষক শনাক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে তালিকা পাঠিয়েছিলো পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। বিভাগ থেকে স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল শিক্ষকের তালিকা পাঠিয়ে এমপিও বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়েছিলো। একই সঙ্গে তাদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা আটকানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিলো। তবে তখন তা কার্যকর হয়নি। তারপর মে ও জুন মাসের এমপিও’র পাশাপাশি ঈদুল আজহার উৎসব ভাতাও দেয়া হয়েছিলো জাল শিক্ষকদের। অবশেষে তাদের এমপিও স্থগিত করা হলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জাল শিক্ষকদের কাছ থেকে এবার এমপিও বাবদ নেয়া সব টাকা ফেরত নেয়া হবে। তাদের টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠাবে অধিদপ্তর। টাকা ফেরত না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস (ফৌজদারি মামলা) দায়ের করা হবে।
কতজন জাল শিক্ষকের এমপিও বন্ধ হয়েছে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, মোটামুটি সবার এমপিও বন্ধ হয়েছে। তবে দু’-চারজন বাকি থাকলেও থাকতে পারেন। শোকজের প্রক্রিয়া শেষ না হলে তাদের বেতন আমরা বন্ধ করতে পারি না। তবে, যাদের এমপিও এখনো বন্ধ হয়নি তাদেরটা দ্রুতই বন্ধ হবে।
তিনি আরো বলেন, তবে যদি কোনো শিক্ষক মনে করেন তার সনদ সঠিক আছে, কিন্তু কোনো ভুলে তার বেতন বন্ধ হয়েছে, তিনি পুনর্বিবেচনার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণ ও কাগজপত্রসহ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার বিকেলে অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত এমপিও ভাউচার ও শিট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাল শিক্ষকদের এমপিওর টাকা পাঠানো হয়নি ব্যাংকগুলোতে। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার শহীদ গিয়াস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল সনদ নিয়ে চাকরি করা সহকারী শিক্ষিকা শামীমা সুলতানা ও জুলেখা আক্তারের বেতন বন্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে শামীমা সুলতানার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও জুলেখা আক্তারের কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা ফেরত নেবে সরকার।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দত্তের বাজার ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে জাল সনদ নিয়ে চাকরি করা এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক শাকিলা আক্তার, রাজিউল হক, মোহাম্মদ দীন ইসলাম, সালমা আক্তার ও মো. নাছির উদ্দিনের এমপিও বন্ধ করা হয়েছে।
গত ১৮ মে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত জাল সনদধারী ৬৭৮ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছিলো তাদের মধ্যে এমপিভুক্তদের বেতন বন্ধ করতে। ওই তালিকায় স্থান পাওয়া জাল শিক্ষকদের মধ্যে ৪৭৯ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছিলেন। বাকি ১৯৯ জন শিক্ষক ননএমপিও বা সরকারি অনুদানভুক্ত নন। জাল সনদধারীদের মধ্যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে ৩২৩ জন, ১২৫ জন জাল কম্পিউটার সনদ নিয়ে ও ৩১ জন বিএড-বিপিএডসহ অন্যান্য সনদ জাল করে এমপিওভোগ করছিলেন।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।