দৈনিক শিক্ষাডটকম, নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার আকাশকুড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে জাল সনদ দেখিয়ে প্রায় দুই যুগ ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন এক ব্যক্তি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সেলিম সিকদার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ তথ্য জানা যায়।
২৯ মে প্রকাশিত নোটিশে নিয়োগ ও এমপিও সংক্রান্ত (নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, রেজুলেশন খাতা, টেবুলেশন শিট, সনদপত্র, এমপিও শিট) সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ (মূল কপি ও ফটোকপি) বৃহস্পতিবার (গতকাল) শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। পরে ৪ জুন (বুধবার) শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ভিন্ন আরেক নোটিশে আগামী ৯ জুন শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়।
জাল সনদের অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম ত হ ম আবু তাহের। তিনি উপজেলার নিজপাড়া এলাকার মৃত বাহার উদ্দিন ছেলে এবং স্থানীয় আকাশকুড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মানবিক শাখা থেকে এসএসসি, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে একই বিভাগে এইচএসসি ও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পাস করে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা অ্যাকাডেমি (নট্রামস) থেকে কম্পিউটার ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন আবু তাহের। ওই সনদ দেখিয়ে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ আকাশকুড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান (ইনডেক্স নাম্বার-১০১৮০০৭)। নিয়োগ বোর্ডে তার দেয়া কম্পিউটার ডিপ্লোমা সনদের সিরিয়াল নাম্বার-১৭০৩৩, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার-১৮৯৯০ এবং ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কোর্সটি সম্পন্ন করেন সে বছরের ৩০ জুলাই। এতে প্রথম শ্রেণীতে কৃতকার্য হন তিনি। এসব সনদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটার ডিপ্লোমার সনদকে জাল বলে আখ্যায়িত করেন।
শুনানিতে অংশগ্রহণের নোটিশপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক ত হ ম আবু তাহের বলেন, দিনাজপুরে যুব উন্নয়নের অধীনে ছয় মাসের ট্রেনিং শেষে বগুড়া নট্রামস সার্টিফিকেট দিয়েছে। আমার যা যা কাগজপত্র আছে স্যারকে দেখাব। তারপর স্যার যেটা মনে করবেন- সেটাই আমাকে মেনে নিতে হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সেলিম সিকদার বলেন, পরিদর্শন নিরীক্ষা অধিদফতর অনুসন্ধান করে জাল সনদ হিসেবে শনাক্ত করেছে এবং তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যাচাইয়ের জন্য দিয়েছিল। নট্রামস জানিয়েছে এটা তাদের সনদ না। যেহেতু তাদের সনদ না সেহেতু জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে সত্যতা প্রমাণিত হলে বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, উত্তোলন করা বেতন ভাতা বাবদ যে টাকা নিয়েছে, তা সরকারি তহবিল জমা দিতে হবে। ফেরতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে। যদি কেউ টাকা ফেরত না দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক মামলা দায়ের করবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক যদি তার পক্ষে কোনো সুযোগ নেয় তাহলে আমরা তারও বেতন ভাতা বন্ধ করে দেবো।