জাল সনদ দিয়ে নিজের ছেলেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। নিয়োগের ৬ বছর পর সেই শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেন প্রধান শিক্ষক ছেলে। এ ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর জলঢাকার দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ‘দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে বছরের ১৪ নভেম্বর ওই স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক এবং তিনজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক কমপক্ষে ডিগ্রি পাস পাসের যোগ্যতা প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তা না থাকায় ডিগ্রি পাসের জাল সনদে ছেলে কাঞ্চন কুমার রায়কে সে বছরের ২৮ নভেম্বর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন সেই সময়ের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি উকিল চন্দ্র রায়।
চাকরিতে যোগদানের পর সেই সময়ের উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুলতানা রাজিয়া সত্যায়িত কাঞ্চন কুমার রায়ের জমা দেয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাসের সনদটির শিক্ষার্থী আইডি নম্বর ছিলো ০৫-০-২৩-৩০০-১৯৩। কিন্তু বাউবির ওয়েবসাইটে যাচাই করে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে সেই ডিগ্রি পাসের সনদটি বিকাশ চন্দ্র রায় নামে অন্য এক ব্যক্তির।
পরবর্তীতে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই সারা দেশের মতো জলঢাকা উপজেলায় ৩৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইকালে নিজের ডিগ্রি পাস সনদ না থাকায় একটি জাল সনদ দাখিল করেন কাঞ্চন কুমার রায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, স্কুল সরকারি হবে এমন খবর পেয়ে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তি হয়ে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ডিগ্রি পাস করেন কাঞ্চন কুমার রায়। তার সে সনদের একটি কপি দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে আছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে স্কুলের সেই সময়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী উকিল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আপনি যতো বাড়াবাড়ি করবেন ততই আপনার সমস্যা আছে, সময় বলে দেবে’। এ হুমকি দিয়ে মুঠোফোন কল কেটে দেন তিনি।
তবে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মাদ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অবশ্যই ডিগ্রি পাস থাকতে হবে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।