শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষকদের সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে বলে তথ্যে জানা গেছে। অবশ্যই এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। জাল সনদে কেউ শিক্ষক হবেন..আর সেই শিক্ষক আমাদের সন্তানদের আদর্শ মানুষ করে গড়ে তুলবেন এমনটি প্রত্যাশা করা যায় না। তাই অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ও নিখুঁতভাবে করা উচিত এ কাজ। অথচ 'জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিয়োগকৃত' শিক্ষকদের চিহ্নিত করে তথ্য প্রেরণ করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫ কর্ম দিবস!
যারা 'জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিয়োগকৃত' অর্থাৎ নিয়োগ নিয়েছেন বা নিতে পেরেছেন ও কর্মরত আছেন..তারা তো সহজ মানুষ নন যে প্রশ্ন করলেই বলবেন, আমার সার্টিফিকেট জাল! তাই এতো সংক্ষিপ্ত সময়ে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে কর্মরত শিক্ষকদের সনদের সত্য/মিথ্যা নিশ্চিত হয়ে তথ্য প্রেরণ করা বাস্তবে সম্ভব নয়।
সঠিকভাবে এই পরিচালনার কাজ করতে গেলে কয়েকদিনে তো দূরের কথা, কয়েক মাসেও সম্ভব হবে কীনা বলা মুশকিল! কেননা, মাঠের বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০-২০ জন, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫০-৬০ জন, আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষক কর্মরত আছেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মরত একেকজন শিক্ষকের কম/বেশি ৪-৬টি সনদ বিদ্যমান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত এসব সনদের সত্যতা নিশ্চিত হবার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা ও পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন।
কেননা, সকল শিক্ষকের বিশেষ করে সিনিয়র শিক্ষকদের সমুদয় সনদ এখনো অনলাইনে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। সারাদেশ থেকে লাখ লাখ শিক্ষকের সনদ যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্র/তথ্য/সনদ প্রেরণ করা হলে ম্যানুয়ালি যাচাই করে রিপ্লাই করতে তাদের কতদিন লাগবে..তা স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রধানদের পক্ষে ধারণা করাও কঠিন!
যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিশ্চিত না করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পক্ষে তার অধীনস্থ শিক্ষকদের সনদের সত্যতা/অসত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, উচিত নয় এবং তা অনৈতিক। প্রকৃতপক্ষে, দায়সারাভাবে করতে না চাইলে এক সঙ্গে লাখ লাখ শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক সনদের সত্যতা যাচাই একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। শিক্ষকদের নিয়োগকালে ও এমপিও প্রদানকালে তা সঠিকভাবে করা হয়নি বলেই এর জন্য এখন পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন হবে।
তাই বলে থেমে থাকলে বা দায়সারাভাবে কাজ করলে চলবে না। সময়-শ্রম যতই লাগুক জাল সার্টিফিকেটধারী শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক। তাছাড়া শিক্ষকদের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের সনদের সত্যতাও একই কারণে যাচাই করা আবশ্যক। সে ক্ষেত্রে আরও বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে। কর্তৃপক্ষ বাস্তবতার নিরিখে সবটুকু বিবেচনায় নিয়ে পুনরাদেশ প্রদান করবেন বলে আমার আজকের প্রত্যাশা।
লেখক: মো. রহমত উল্লাহ্,অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা