রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ও সচেতনতার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৪ নভেম্বর থেকে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী এই কাজে যুক্ত হবেন। তাদের সম্মানী দিতে সরকারের ব্যয় হতে পারে প্রায় ৭ কোটি টাকা।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, চালক ও সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সচেতন করা শিক্ষার্থীদের মূল কাজ। তাঁরা সেটা করছেন। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে প্রস্তাব করা হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ২১ অক্টোবর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ‘ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪’ অনুষ্ঠানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। একই অনুষ্ঠানে এমন কথা জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সূত্র জানায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রথমে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি তালিকা পায় ডিএমপি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে শারীরিক পরীক্ষা শেষে তালিকার ৩০০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। তাদের এক দিনের প্রশিক্ষণে ট্রাফিক আইন ও ট্রাফিক শৃঙ্খলার নানা বিষয়ে ধারণা দিয়ে সড়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আরও ৩০০ শিক্ষার্থীকে শারীরিক পরীক্ষা শেষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, ৪ নভেম্বর থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে প্রতিদিন ৬০ জন শাহবাগ, বাংলামোটর, পান্থপথ, ফার্মগেট, মৎস্য ভবন মোড় ও মগবাজার মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দুই শিফটে কাজ করছেন। প্রথম শিফটে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ জন এবং দ্বিতীয় শিফটে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৩০ শিক্ষার্থী কাজ করছেন। প্রতি শিফটের প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাবেন ৫০০ টাকা। ৬০০ শিক্ষার্থী যুক্ত থাকবেন ডিএমপির ৮টি ট্রাফিক বিভাগে। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাফিক বিভাগে সকালের শিফটে ৪০ ও বিকেলের শিফটে ৩৫ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে। ৬০০ জনের জন্য দিনে খরচ হবে ৩ লাখ টাকা। সম্মানী দেওয়া হবে সপ্তাহে সপ্তাহে। আগামী জুন পর্যন্ত তাদের যুক্ত রাখতে মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএমপি।
৬০০ জনের সম্মানী বাবদ দিনে ৩ লাখ টাকা লাগবে। এ হিসেবে আগামী জুন পর্যন্ত তাদের প্রতিদিন সড়কের শৃঙ্খলার কাজে যুক্ত করলে সম্মানীতে ব্যয় হবে প্রায় ৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামছুল হক বলেন, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতাসহ এ ধরনের পরিবেশে সড়কে শিক্ষার্থীদের কাজে দেওয়া ঠিক নয়। বর্তমানে পুলিশের অবস্থা ও মানুষের আইন না মানার প্রবণতার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ঠিক হলেও তাদের নিরাপত্তা আগে দেখতে হবে। যত দ্রুত তাদের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া যায়, তত ভালো হবে। তিনি বলেন, ‘পুরোনো ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে সবার লক্ষ্য, আমরা সেখানে বেশ পিছিয়ে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষ কমানো, বাড়ানো নয়।’