বিজ্ঞান কল্পকাহিনি রচয়িতা জুলভার্নের আজ মৃত্যুবার্ষিকী। জুলভার্ন অসামান্য সব বিজ্ঞান কল্পকাহিনি রচনার জন্য বিখ্যাত। উড়োজাহাজ, রকেট কিংবা সাবমেরিনের বাস্তবিক ও ব্যবহারিক প্রয়োগের অনেক পূর্বেই তিনি মহাকাশ ভ্রমণ ও সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণের কল্পকাহিনী লিখেছিলেন। পৃথিবীতে আগাথা ক্রিস্টির পরেই তার লেখা সবচেয়ে বেশি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা বেশ কিছু কাহিনি নিয়ে চলচ্চিত্র ও নাটকও নির্মিত হয়েছে।
জুলভার্ন ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের পশ্চিমে বিস্কে উপসাগরের তীরে অবস্থিত নঁত নামের বন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পিয়ের ভ্যার্ন, এবং মা সোফি আলৎ দ্য লা ফুই। তার শৈশব কাটে এখানকার বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তারা গ্রীষ্মকাল কাটাতেন নঁতের কাছেই ব্রে শহরে। সেখানে জুলভার্ন ও তার ভাই পল প্রায়ই এক ফ্রাঁ দিয়ে এক দিনের জন্য নৌকা ভাড়া নিতেন। জুলভার্নের মতে, নদীতে প্রচুর জলযানের চলাচলের দৃশ্য তার কল্পনাশক্তির স্ফুরণ ঘটায়। ১২ বছর বয়সে জাহাজের কেবিনবয় হিসেবে কাজ নিয়ে বাড়ি থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন এখন থেকে নিজের মনের মধ্যেই ঘুরে বেড়াবেন। বাবার ইচ্ছায় আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে বেশ প্রসার লাভ করেন। এ পেশার প্রতি অভিযানপ্রিয় জুলভার্ন খুব দ্রুত বিরক্ত হয়ে পড়েন এবং ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আইন ব্যবসা ছেড়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়।
সাহিত্যাঙ্গনে তার প্রবেশ ঘটে মঞ্চনাটক লেখার মাধ্যমে। তার লেখা মঞ্চনাটক বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তার লেখা প্রথম বই বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ অত্যন্ত অবাস্তব বলে কোনো প্রকাশক ছাপতে রাজী না হওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে এর পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়িয়ে ফেলার সময় তার স্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা রক্ষা পায়। পরে এ বইটি প্রকাশিত হলে রাতারাতি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড ঘরকুনো এই লেখক তার বাড়ির চিলেকোঠায় বসেই লিখে গেছেন বিশ্বমাতানো সব কল্পবিজ্ঞান কাহিনি। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন নিমো, রোবার ও ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস উল্লেখযোগ্য। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ ও নানা সাহেবের ইতিহাস আশ্রিত তার উপন্যাস টাইগার্স এন্ড ট্রেটস-এ অবিভক্ত ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। তার উল্লেযোগ্য কল্পকাহিনিগুলো হলো-পৃথিবীর কেন্দ্রে যাত্রা, সমুদ্রের নীচে কুড়ি হাজার লিগ এবং আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ। তার তথ্যসমৃদ্ধ উপন্যাসগুলো সাধারণত ১৯শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের প্রেক্ষিতে সেই সময়কার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনা করে রচিত।
ফ্রান্স সাহিত্য অ্যাকাডেমি তাকে ‘অর্ডার অব মেরিট’ সম্মানে ভূষিত করে। জুলভার্ন ইংল্যান্ড রয়াল অ্যাকাডেমির সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে জনপ্রিয় কল্পকাহিনি লেখক জুলভার্ন মৃত্যুবরণ করেন।