টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ দুই শিক্ষকের জালিয়াতি উৎসব - দৈনিকশিক্ষা

টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ দুই শিক্ষকের জালিয়াতি উৎসব

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

প্রদর্শক পদে চাকরি করেও তিনি নির্বাচন ছাড়া দীর্ঘ ১২ বছর শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সনদ জালিয়াতি করে নিয়োগ পেয়ে এখন হয়ে উঠেছেন কলেজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। 

তিনি টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের প্রদর্শক আবু জাফর আহম্মেদ। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষক আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে তিনি জালিয়াতি করে নিয়োগ নিয়েছেন এবং একই সময়ে দুই প্রতিষ্ঠানের বেতন উঠিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমাও দেননি তিনি।

সম্প্রতি দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে গাজীপুরের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন সব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।

মো. আবু জাফর আহমেদ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে যোগদান করেন। যোগদানের সময় তার এসএসসির সনদে জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর। তবে তার এই জন্ম তারিখ মিথ্যা-এমন অভিযোগ ওঠার পরে দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এ তথ্যের সত্যতাও মিলেছে। 

সম্প্রতি বোর্ড থেকে সংগৃহীত তার মূল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে দেখেছে দৈনিক আমাদের বার্তা। তাতে জন্ম তারিখ রয়েছে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর। তবে বাকি তথ্য জাফরের দাবি অনুযায়ী ঠিক আছে।

তার জন্ম তারিখ ৬৩ খ্রিষ্টাব্দে হলে নীতিমালা অনুযায়ী এই শিক্ষক ২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তিনি এখনো চাকরি করছেন।

এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ২১ জন প্রভাষক, সিনিয়র প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও প্রদর্শক আবু জাফর আহমেদ নির্বাচন ছাড়াই একটানা ১২ বছর যাবৎ শিক্ষক প্রতিনিধিত্ব করছেন। যা অনৈতিক বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

জাফর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও অধ্যক্ষের সঙ্গে অতিমাত্রায় সখ্যতার কারণে নানাবিধ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। যার উদাহরণ হিসেবে স্থানীয়রা জানান, তিনি ৩০ লাখ টাকার দোকান নামমাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে কিনে ৩৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।

অপরদিকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন। তিনি ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। আবার ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শাখায় প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। 

কলেজে যোগদানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতোকত্তোর ডিগ্রি থাকতে হবে। অথচ তিনি মাস্টার্স পাস করেন ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। এই তথ্যের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি দৈনিক আমোদের বার্তার অনুসন্ধানী দল সংগ্রহ করেছে। 

তাতে দেখা গেছে আমজাদ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগপত্র দিয়ে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল শাখায় এমপিওভুক্ত হন এবং ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের মে পর্যন্ত এমপিও ভোগ করেন। যদিও তিনি স্কুল শাখা থেকে পদত্যাগ করেন ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর। 

আবার তিনি ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগপত্র দিয়ে কলেজ শাখায় এমপিওভুক্ত হয়ে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের মে পর্যন্ত এরিয়া করে পাঁচ মাসের বেতন তোলেন।

অর্থাৎ ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এই পাঁচ মাস স্কুল ও কলেজের দ্বৈত বেতন-ভাতা তোলেন তিনি। তবে পরে স্কুলের বেতন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি তা জমা দেননি। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

এ ছাড়াও তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে বেতন গ্রেড ৭-এ এবং ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে বেতন গ্রেড ৬-এ পদোন্নতি নেন। অর্থাৎ তিন মাসে দুটি পদোন্নতি নেন। পরে এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শোকজ নোটিশ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে। অধ্যক্ষ সেই শোকজের জবাবে উল্লেখ করেন, তার অজ্ঞাতসারে বিষয়টি হয়েছে। যা হাস্যকরও বটে। তবে তিনি আমজাদের এমপিও কাটার ও ওই সময়ে পাওয়া বেতন–ভাতা কোষাগারে ফেরত দেয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তিনি বহাল তবিয়তে বেতন-ভাতা তুলে যাচ্ছেন।  

আমজাদ কলেজ শাখার একমাত্র এমপিওভুক্ত হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক অথচ তিনি কলেজে কোনো ক্লাস নেননা, এমনকি ক্লাসরুটিনে তার নামও নেই। 

তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে অতিমাত্রায় সখ্যতার কারণে সমন্বয়কারী পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন। অনুসন্ধানে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

তিনি স্কুল থেকে কলেজে, কলেজ থেকে স্কুলে, আবার স্কুল থেকে কলেজে পদত্যাগ না করে বা নতুন নিয়োগ না নিয়ে সুবিধামতো পদ স্থানান্তর করেন যা চাকরিবিধির পরিপন্থি।
এ ব্যাপারে আমজাদ হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আপনি কলেজে আসেন সবকিছু যাচাই-বাছাই করে লিখবেন। কিন্তু তথ্য আপনারা পেলে পেতে পারেন, সেগুলো কিছু ভুল থাকে আবার সত্য থাকে। আপনাদের ক্ষমতা হলো আপনারা একটু লিখতে পারবেন। কিন্তু আমরা আপনাদের অধীনে চাকরি করি না, যেটা সত্য। 

আপনি দ্বৈত বেতন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন কি না? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা প্রমাণের জন্য আপনি কলেজে আসেন। আমি এ নিয়ে কোনো ভয় পাই না। আপনি যাচাই করে লেখেন, যাচাই করে না লিখলে আপনাদেরও বিপদ হতে পারে। আপনি আমার বিরুদ্ধে লিখলে আপনার বিরুদ্ধেও লিখবো বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।   

এ ছাড়াও তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একদল লোক মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। আপনার কাছে থাকা কাগজপত্র ভুয়াও হতে পারে। অতএব যাচাই-বাছাই করে লিখবেন।  

তবে এ ব্যাপারে বারবার কল করা হলেও প্রদর্শক আবু জাফর আহম্মেদ রিসিভ করেননি বলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

এ ব্যাপারে কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদিন জানান, এ বিষয়ে আমার কিছুই করার নেই। জাফর আহম্মেদ শিক্ষক প্রতিনিধি। তিনি শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত, তাকে শিক্ষকরা ভোট দেন তাই আমার এ বিষয়টি জানার কথা নয়। 

অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া জানান, এ সব বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের আলোকে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073161125183105