টাকায় বিনিময়ে জিপিএ-৫ দেয়ার আশ্বাস, ৮১৬ পরীক্ষার্থীর বেশিরভাগই ফেল - দৈনিকশিক্ষা

টাকায় বিনিময়ে জিপিএ-৫ দেয়ার আশ্বাস, ৮১৬ পরীক্ষার্থীর বেশিরভাগই ফেল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

পড়াশোনা করতে হবে না। শুধু টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলেই হবে। এতে মিলবে পাসের নিশ্চয়তা ও জিপিএ-৫। বাকি দায়-দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

এমন লোভনীয় মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ৮১৬ শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করেছিল ময়মনসিংহের ভালুকার মর্নিংসান মডেল কলেজ। অনুমোদন ছাড়াই অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে এনে প্রতিষ্ঠানটি এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়। এতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

২৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাই উত্তীর্ণ হয়নি। এরপরই শিক্ষার্থীরা আসল গোমর ফাঁস করে দেয়। এ নিয়ে ২৬ নভেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত চলছে নানা সমালোচনা ও বিতর্ক।

অভিভাবকরা শিক্ষকদের বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষকের কাছে গিয়েও তার দেখা পাচ্ছেন না তারা। উলটো গত কয়েকদিন ধরে এসব শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন হুমকি।

এদিকে মর্নিংসান মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে শাখা খোলার কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।

কলেজ সূত্র জানায়, ভালুকা পৌরসভার মেজরভিটা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে আতাউর রহমান জুয়েল নামের এক ব্যাক্তি মর্নিংসান নামের একটি কিন্ডারগার্টেন খোলেন। তিনিই ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরে সেটিকে মডেল স্কুল এবং ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শাখা চালু করা হয়। তখন আতাউর রহমান জুয়েল হয়ে যান কলেজের অধ্যক্ষ।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দে মর্নিংসান মডেল কলেজ থেকে ২৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ২১৬ জন, পরের বছর ২৪৪ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ২২২ জন। চলতি বছরে একজন অনিয়মিতসহ এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ৮১৬ জন। এর মধ্যে অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৪৪৩ পরীক্ষার্থী। যেখানে উত্তীর্ণের হার ৪৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই (বিটিসি) মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের যোগসাজশে মর্নিংসান মডেল কলেজের অধ্যক্ষ অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এইচএসসির ফল প্রকাশের আগে পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বর পরিবর্তন করে নতুন রোল নম্বর সংবলিত আরেকটি প্রবেশপত্র সরবরাহ করা হয়।

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই দুটি কলেজ শাখা চালু করেছে মর্নিংসান মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। যার একটি শাখা খোলা হয় ঢাকা বোর্ডের অধীন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। অপরটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি বাসস্ট্যান্ডের খাদিজা প্যালেস মার্কেটে।

অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা জানায়, অভিযুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ শতভাগ পাসের নিশ্চয়তা দেন। সেই নিশ্চয়তা পেয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা ভালুকা মর্নিংসান মডেল কলেজে ভর্তি হয়ে ফরম পূরণ করে এবং প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

২৬ নভেম্বর ফল প্রকাশের পর তারা পরীক্ষার খাতার রোল নম্বরে সার্চ দিলে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীর নাম আসে। পরে কলেজ গেলে কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে নতুন রোল নম্বর সংবলিত আরেকটি প্রবেশপত্র ধরিয়ে দেয়। নতুন রোল নম্বরে সার্চ দিলে অনুত্তীর্ণ দেখায়।

এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষকে ৩ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। অপরিচিত বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করা জন্য এসব শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।

গাজীপুরের মাওনা পিয়ার আলী কলেজ থেকে নির্বাচনি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছিল মুন্নি আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী। সে জানায়, শতভাগ পাসের নিশ্চয়তায় ২৮ হাজার টাকায় মর্নিংসান কলেজে ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ভালো পরীক্ষা দিয়েও অনুত্তীর্ণ হয়েছে সে। একই অভিযোগ করেন রুনা, নূপুর আক্তার, সাদিয়া ও মিম নামের শিক্ষার্থী। এরমধ্যে রুনা ৫০ হাজার এবং মিম ২৫ হাজার টাকায় ফরম পূরণ করে।

মাওনা এলাকার বাসিন্দা এক পরীক্ষার্থীর বাবা ইমান আলী জানান, অধ্যক্ষের আশ্বাসে আমার মেয়ে শতভাগ পাসের নিশ্চয়তা পেয়ে মর্নিংসান কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় সে অনুত্তীর্ণ হয়েছে।

মর্নিংসান মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান শতভাগ পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করেন। টিসি ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। বোর্ডের নিয়মের বাইরে কোনো টাকা নেননি তিনি।

ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামাল জানান, মর্নিংসান কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আমার বিশেষ কোনো সখ্য নেই। বিগত ৫ বছরে আমি তার কলেজ একবার পরিদর্শন করেছি। বোর্ড ট্রান্সফার সার্টিফিকেটে (বিটিসি) ছাড়া অন্য বোর্ডের ভর্তি বিষয়টি দেখার দায়িত্ব কলেজ অধ্যক্ষের। শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরীক্ষার ফলাফলে কোনো অনিয়ম থাকলে কেউ ছাড় পাবে না।

ওই কলেজের অনিয়মের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এবার বোর্ডে ২৯টি কলেজের ৯ হাজারের উপরে পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর নিয়ে সমস্যা হয়েছে। এক মাস আগেই নিজ নিজ কেন্দ্রে সংশোধিত নতুন রোল নম্বর সংবলিত প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061440467834473