রাজধানীতে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের সঙ্গে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে চার ঘণ্টা। প্রথম পর্যায়ে ২১৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর ৬০ জন শিক্ষার্থী দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
প্রশিক্ষণ দেয়া মোট ৬০০ শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব দেয়া হবে। দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিদিন ৫০০ টাকা সম্মানী পাবেন প্রতিজন শিক্ষার্থী। এই সময় শিক্ষার্থীদের পরনে বিশেষ ধরনের জ্যাকেট থাকবে, যাতে তাঁদের আলাদা করে চেনা যায়।
আগামী বছর জুন মাস পর্যন্ত এই শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ছিল ট্রাফিক পক্ষ। ওই সময়ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী।
ট্রাফিক পক্ষে শিক্ষার্থীরা নগরবাসীকে ট্রাফিক সচেতনতায় ভূমিকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পক্ষে সড়কে নগরবাসীকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করার কাজ করেছেন।
প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তার পরই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ নভেম্বর ট্রাফিক পক্ষের শেষ দিন থেকে প্রশিক্ষিত ৬০ জন শিক্ষার্থী দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে অন্য প্রশিক্ষিতরাও দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। প্রাথমিকভাবে রমনা ও তেজগাঁও এলাকায় প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, ট্রাফিক পক্ষের ১৫ দিনে মামলা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৪০টি।
এ সময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮০০ টাকা। ছয় হাজার ৬৩৬টি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত ২৯ হাজার ২৮০টি রিকশার ব্যাটারি খুলে নেয়া, ডাম্পিং করা, উল্টে রাখাসহ নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার। শ্রমিকদের সঙ্গে ৩৯৫টি সভা করেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাড়া-মহল্লায়ও সভা করা হয়।
রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিকভাবে ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২১৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ ছাড়া আরো ৩০০ জন নির্বাচন পর্যায়ে রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যাঁদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে তাঁরা বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের যাতে লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রতিদিন তাঁদের দায়িত্ব পালনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে চার ঘণ্টা। পুলিশ সূত্র জানায়, যে সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস থাকে না ওই সময়েই তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে মূলত শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক সচেতনতার কাজটিই বেশি করবেন।
পুলিশ সূত্র আরো জানায়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণে তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আইন বিষয়েও ধারণা দেয়া হচ্ছে।
গত বুধবার শিক্ষার্থীদের রাজধানী কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর মোড়, শাহবাগ ও মৎস্য ভবন মোড়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। দায়িত্ব পালনের সময় শিক্ষার্থীদের গায়ে ডিএমপির লগো-সংবলিত জ্যাকেট দেখা গেছে। জ্যাকেটে লেখা রয়েছে, ‘ট্রাফিক সহায়তাকারী ডিএমপি’।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে শাহবাগ মোড়ে চার শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তাঁরা জানান, ৫ আগস্টের পর পুলিশহীন রাজধানীর সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাঁরা। ওই সময় ট্রাকিফব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁদের কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে আরো সুশৃঙ্খলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা।
সাজিদ হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ট্রাফিকের কাজ করতে আমাদের বেশ লাগছে। আর চার ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের কারণে আমাদের পড়ালেখায়ও ব্যাঘাত ঘটছে না। অভিজ্ঞতার পাশাপশি নগরবাসীকে সেবা করার সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত।’
গত ৩০ অক্টোবর শ্রম, কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রস্তাবিত বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ট্রাফিক বিভাগে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।