ডলার সংকটে বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশের মতো বেসামাল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশও। নিত্যপণ্য আমদানির তহবিল যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। টাকার বিপরীতে আমেরিকান ডলারের ক্রমবর্ধমান শক্তির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে কেবল কয়েক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতে পারে। উদ্বিগ্ন আমদানিকারকরা তাই খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।
দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান সম্প্রতি সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে একটি চিঠি দিয়ে ডলার সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের আমদানি সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দিয়েছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে স্থানীয় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও দাম স্থিতিশীল রাখতে ভোজ্যতেল, পরিশোধিত চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুর আমদানির সুবিধার্থে ব্যাংকগুলোতে ডলার বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়েছিলো।
তবে, দেশবন্ধু এমডির অভিযোগ, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক শাখাগুলো এখনও চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা হোল্ডিংয়ের অংশ বরাদ্দ করেনি। ডলারের ঘাটতি ইতোমধ্যেই দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের আমদানিতে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে। তাদের আমদানি করা ৫২ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বহিঃনোঙ্গরের মাদার ভেসেল থেকে ছাড়াতে বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হচ্ছে। গত ১৭ জুলাই আরো ১৫ হাজার ৩৯৫ মেট্রিক টনের এলসি খুলেছে দেশবন্ধু। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে চার হাজার মেট্রিক টন চিনি আনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আন্তর্জাতিক নিশ্চিতকরণ হিসাবটি এখন কার্যকর নয়। বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে এখনও এলসি নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
দেশবন্ধুর তরফে বলা হচ্ছে, এলসিতে দীর্ঘ বিলম্ব হলে সরবরাহকারী জাহাজ অন্য গন্তব্যে চলে যেতে পারে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব মার্কিন ডলারে এলসির টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাই, অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য চিনি আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থা করবে এমন উপযুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক খুঁজে বের করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে দেশবন্ধু। চিঠিতে ছয়টি ব্যাংকের শাখার কথা উল্লেখ করেছেন দেশবন্ধু সুগারের এমডি। এগুলো হলো- ঢাকায় ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বনানী শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখা, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের বনানী শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকার প্রধান শাখা এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল শাখা।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অভ্যন্তরীণ আর্থিক অব্যবস্থাপনায় আমদানি করা নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাহ্যিক উৎস থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে উচ্চ ব্যয়ের কারণে আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে এলসির চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত মার্কিন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে। আর এলসি-সেটেলমেন্ট কমেছে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। চাল ও গম আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ কমেছে। চিনি ও লবণে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, নিষ্পত্তি কমেছে ২০ শতাংশ। এতে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ব্যাঙ্কগুলোর ওপর চাপ তৈরি করেছে ১১৫ টাকায় উন্নীত হওয়া এলসি রেট। মুদ্রাস্ফীতিতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।