ডিমের জারিজুরি - দৈনিকশিক্ষা

ডিমের জারিজুরি

গাজী তারেক আজিজ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

ডিম এখন আর ডিমের মধ্যে সীমিত নেই। ডিম এখন জাতীয় ইস্যু। যে ডিম বিক্রি করতে মুরগির খামারী হিমশিম খেতো সে ডিমই আজ সোনার মোহরে কিনতে হবে মনে হয়। একেক সময় একেক পণ্য অনেকটা গায়ের জোরে জবরদস্তিমূলক নিজের দাম বাড়িয়ে নেয়। কিছুদিন আগেই পেঁয়াজ ১৭ টাকা থেকে লাফিয়ে ৩শ ছুঁয়ে সেই পেঁয়াজ ১২০ টাকার আশেপাশে থিতু হলো। ভোজ্য তেল ৮০-৮৫ টাকা থেকে প্রায় ২শ ছুঁয়ে এখন ১৬০-১৭০ পর্যন্ত। আলু ২০ টাকা থেকে ৬৫-৭০ টাকা বা তারও বেশি। কাঁচামরিচের যখন দাম বাড়ে তখন ১৩শ টাকাও হয়। আর কমলে সেটা ১০-১৫ টাকাও হয়। তবে তখন প্রান্তিক কৃষক পেয়ে থাকে ক্ষেত্র বিশেষে ১-২ টাকা কেজি। মাঝখানে অদৃশ্য সিন্ডিকেটের ভেলকি! ভোক্তার নাভিশ্বাস।

কথায় আছে অশ্বডিম্ব বা ঘোড়ার ডিম। যা কাল্পনিক মাত্র। মানুষ যেকোনো অবাস্তব বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বোঝাতে এই ঘোড়ারডিম শব্দের ব্যবহার করে থাকেন। এই ঘোড়ারডিম শব্দের প্রচলন ঠিক কবে থেকে তার ইতিহাস জানা যায়নি। মানুষের কথার কথা এক সময় মুদ্রাদোষে পরিণত হতে থাকে। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি তখন কলেজের লাইব্রেরিয়ান যেকোনো কথায় বলতো ‘মান্ড’। যা ছিলো তার মুদ্রাদোষ। ছাত্রদের কেউ কেউ তাকে ‘মান্ড স্যার’ সম্বোধন করতো। আবার তার সঙ্গে কথা বলার সময় ছাত্রদের অনেকেই ঠাট্টা বিদ্রুপ করে কথায় কথায় মান্ড মান্ড করতো। এতে করে সে না বুঝলেও অন্য ছাত্ররা ঠিকই হাসাহাসি করতো।

বর্তমান সময়ে অশ্বডিম্ব বা ঘোড়ার ডিম নয় মুরগির ডিমে বাজার নাকাল। হুট করে বাজারদরের দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় ডিমও এই মুহূর্তে আলোচিত ইস্যু। কিছুতেই এর দর সাধারণের নাগালে আনা যাচ্ছে না। কার্যকর যে সব পদক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় সবই কার্যত ব্যর্থ। শেষমেশ প্রবল শত্রুভাবাপন্ন ভারত থেকে আমদানি করা হয়। যার দর ৭টাকার কম হলেও বাজারে ঠিকই ১৫ টাকা। আর এর থেকে মানুষ কটাক্ষ করতে শুরু করে ‘পানির দামে ডিম’ বলে। এই পানির দামে ডিম মানে হচ্ছে এক বোতল হাফ লিটার পানি ১৫ টাকা আর একটা ডিমও ১৫ টাকা। তাই সাধারণের কাছে কথাটি ব্যাপক কৌতুহল তৈরি করলেও ক্রয়ের নাগালে না থাকায় ডিম কিনছেন না অনেকেই। খাদ্য তালিকা থেকেও এই সহজ পুষ্টির আধার ডিম বাদ দিতেও বাধ্য হয়েছে। হয়তো ডিমের দাম কমবে কিন্তু একবার বাড়লে যে কতটুকু কমবে সেও ভবিতব্য। যদিও সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

বাজারে সবজি-ফল সবকিছুই নিম্নবিত্ত মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় মানুষ বেশ অসহায় বোধ করতে শুরু করেছে। এখন বাজারে গেলে হাহাকার। নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেছে।

রিক্সা চালক কিংবা ছোট কাজের আয় কমে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা। যথারীতি ক্রয়মূল্য ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত বাজারে ডিমের মূল্য চড়া থাকায় এখন ডিম বিক্রি বন্ধ রাখতেও বাধ্য হয়েছেন আড়ৎদার। আবার গত সরকারের বিরোধী শক্তি সেই পুরনো সিন্ডিকেটকে দুষছেন! দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে উদর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিয়েও দায় সারতে চাইছে। আদৌ কি সেটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে? মানুষ কি তাদের কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছে? আর এই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখেই বলা যায়, রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু মানুষের ভাগ্যের মৌলিক কোন পরিবর্তন ঘটে না। মানুষ নিস্তেজ হয়ে যায়। অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। শরীরে পুষ্টির ঘাটতিতে আর তো শরীর চলে না।

পট পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলেও মানুষের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। আমরা যারা ক্ষুধিত মানুষজন তাদের কলবের ডাক আল্লাহ ছাড়া বোঝার কেউই নেই। সরকারের উপদেষ্টা মানুষের চাহিদার জোগান দিতে না পেরে অনেকটা শ্লাঘা মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠেন ‘আমার কাছে ডিম বানানোর মেশিন নেই’। মানুষ যদি আপনার অক্ষমতা বুঝতো তবে সেই পদে আসীন করতো না। আপনি উপদেষ্টা হয়ে পদ ধরে না রেখে যোগ্য লোককে ছেড়ে দিলে হয়তো মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হতেও পারে।

দিনেদিনে মানুষের অস্থিরতার মাত্রাও যেনো প্রকট হচ্ছে। মানুষ আর আগের মতো ধৈর্য ধারণ করতে পারছে না। আর ব্যবসায়ী মহলও মনে হচ্ছে রাতারাতি টাকা কামাইয়ে ব্যস্ত। মনে করছেন এই বুঝি শেষ সময়। তাদের জন্য আর সময় আসবে না। কখনো দোষারোপ করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। কখনো রাস্তার দোহাই। কখনো উৎপাদন খরচের দোহাই। কখনো সরবরাহের ঘাটতির দোহাই। কখনো আকস্মিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির দোহাই। এত এত দোহাই কাটিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য ও সস্তা করতে সরকারকেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আসলে সবাই নিরুপায়। সবার পেট আছে। প্রতিনিয়ত জোগান দিতে হয়। তবে কেউই কার্যকর সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারছে না। কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসছে না। যতদিন মানুষ নিজে থেকে শুধরে না নিবে ততদিন সংকট বাড়বে। এর থেকে উত্তরণ এত সহজ হবে বলেও মনে হয় না। তবে আমরা ডিম খেতে ভালোবাসি। আমরা চাই ডিম হোক সহজলভ্য। সে আশায় বুক বাঁধি।

লেখক: অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী

 

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা - dainik shiksha জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার - dainik shiksha পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ - dainik shiksha পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে - dainik shiksha কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030639171600342