ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে যা জানা জরুরি : ডা. আবদুল্লাহ - দৈনিকশিক্ষা

ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে যা জানা জরুরি : ডা. আবদুল্লাহ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জলবায়ু পরিবর্তনে সারাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টির ধরন পাল্টে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন সারাদেশে অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, হাসপাতালে ছুটছে। এই শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সালে ডেঙ্গুজ্বর বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ হয়ে পড়ে আতঙ্কগ্রস্ত। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং পরিবার-পরিজন অনেকেই হয়ে পড়েন দিশেহারা। শত শত রোগীর রক্ত এবং প্লাটিলেট জোগাড় করতে গিয়ে ব্লাড ব্যাংকগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল। আর রক্ত বা প্লাটিলেট সংগ্রহ করার জন্য লোকজনও হয়ে উঠেছিল মরিয়া। এ সময়টাতে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাও ছিল সীমিত। ফলে, পুরো জাতিই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। মিডিয়াতেও এর ব্যাপক প্রচার পায়। তবে বর্তমানে মানুষের ওই ভীতি ও আতঙ্ক কেটে গেছে। ডাক্তাররা যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং দক্ষ।

ডেঙ্গুজ্বরের ইতিহাস

ডেঙ্গু কোনো নতুন রোগ নয়, এর উপসর্গের সঙ্গে মিল আছে এমন জ্বরের প্রথম মহামারির ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় ৯৯২ খ্রিস্টাব্দে চীনে, যা ‘পানি বিষ’ নামে বর্ণিত। পরবর্তীতে ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১৬৬৯

খ্রিস্টাব্দে পানামায় যে জ্বরের মহামারির বিবরণ পাওয়া যায়, সেটি ডেঙ্গু বলেই ধারণা করা হয়। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে একই সঙ্গে মহামারির বিবরণ পাওয়া যায় কায়রো এবং বাটাভিয়ায় এবং ১৭৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় এশিয়াতে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের প্রথম মহামারি হয় ১৯৫৩/৫৪ সালে ম্যানিলায় এবং পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে ব্যাঙ্কক ও থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রথম ব্যাপক আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালে, যা পরিচিত ছিল ‘ঢাকা ফিভার’ নামে।

কিভাবে ডেঙ্গুজ্বর হয় 

এডিস ইজিপ্সাই নামক মশার কামড়ে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। তবে এডিস এলবপিকটাস নামক মশার কামড়েও এই রোগ ছড়াতে পারে। ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।

ডেঙ্গুজ্বর কাদের বেশি হয় 

সাধারণত শহর অঞ্চলে অভিজাত এলাকায়, বড় বড় দালানকোঠায় এই মশার প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই ডেঙ্গুজ্বরও এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশি হয়। বস্তিতে বা গ্রামে বসবাসরত লোকজনের ডেঙ্গু একেবারেই হয় না বললেই চলে। ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ ৪ ধরনের, ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। তাই ডেঙ্গুজ্বরও ৪ বার হতে পারে। যারা একবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

মশার পরিবর্তন 

এডিস মশা যেমন চরিত্র পরিবর্তন করেছে, তেমনি বদলেছে ডেঙ্গুরোগের উপসর্গও। একসময় ধারণা করা হতো মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। এখন দেখা যায় অপরিষ্কার ও নোনাপানিতেও ডিম পাড়ছে। আগে এডিস মশা শুধু দিনের বেলা কামড়াত, এখন সব সময় কামড়ায়। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ডেঙ্গুর সম্পর্ক রয়েছে। জুন-জুলাইয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। তবে গত কয়েক বছর ডেঙ্গু রোগী সারাবছর মিলেছে।

বর্তমানে ডেঙ্গুর ধরন 

এবারে অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণের ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। জ্বরের তীব্রতা, তীব্র শরীর ব্যথা এবং র‌্যাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা হচ্ছে। রোগীরা সাধারণ জ্বর মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করছেন এবং যথাযথ চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করছেন। ফলে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক রোগীর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হচ্ছে। রোগীর পালস পাওয়া যায় না, রক্তচাপ কমে যায়, প্রস্রাব হয় না, কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যাচ্ছে। একে বলে ডেঙ্গুশক সিনড্রোম, এটি সবচেয়ে ভয়াবহ, এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। বেশির ভাগ রোগী যারা এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন, তারা দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবার আক্রান্ত হলে তারা ডেঙ্গুশক সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কি কি পরীক্ষা করা উচিত 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বর হলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নেই, এতে অযথা অর্থের অপচয় হয়। রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট জ্বর শুরুর ৪ বা ৫ দিন পর কমতে শুরু করে, তাই ৪ বা ৫ দিন পর রক্তের সিবিসি এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করা উচিত। এর আগে করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকে এবং অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। রোগী এমনকি ডাক্তারও মনে করতে পারেন যে রিপোর্ট ভাল আছে, তাই আর কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আবার অনেকেই দিনে দুই-তিনবার এবং একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন, যা অপ্রয়োজনীয়। প্লাটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম হলে, ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। জ্বরে ১-২ দিনের পরেই ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং ৪ থেকে ৬ দিন পর এন্টি ডেঙ্গু এন্টিবডি করা যেতে পারে। চিকিৎসক যদি মনে করেন তবে প্রয়োজনে ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষা, পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, বুকের এক্সরে এবং ডিআইসি জাতীয় জটিলতার পরীক্ষা করতে পারেন।

চিকিৎসা পদ্ধতি 

ডেঙ্গুজ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বর সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো জটিলতা না হয়। ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত, তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল খেতে পারবেন, অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ যেমন কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে। প্রচুর পানি এবং তরল খাওয়ানো উচিত। খেতে না পারলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।

কিছুকিছু লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে, শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, জন্ডিস দেখা দিলে, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে, প্রচন্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে। এসব ক্ষেত্রে অবহেলা না করে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে কোনো মশা কামড়াতে না পারে। কারণ, আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানো মশা অন্য সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তার ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে এবং এভাবেই ডেঙ্গু অন্যদের মাঝে ছড়ায়।

ডেঙ্গুজ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাক্সিন নেই। যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাস চার টাইপের, তাই এই চারটি ভাইরাসের প্রতিরোধে কাজ করে, এমন ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, এডিস একটি ভদ্র মশা, অভিজাত এলাকায় বড় বড় সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় এরা বাস করে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং এডিস মশা প্রতিরোধ।

ব্যক্তিগত সতর্কতা 

১. মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে, দিনের বেলা যথাসম্ভব শরীর ভালভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। ২. মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। ৩. প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট, স্প্রে, লোশন বা ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। ৪. বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরাতে হবে।

বসতবাড়ির মশা নিধন 

যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে, তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, বাড়িঘরে এবং আশপাশে যে কোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি তিন থেকে পাঁচদিন পরপর ফেলে দিলে এডিস মশার লার্ভা মারা যায়। পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ঘষে পরিষ্কার করলে ভালো হয়। ঘরের বাথরুমে কোথাও জমানো পানি পাঁচ দিনের বেশি যেন না থাকে। একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং মুখ খোলা পানির ট্যাংকে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির ছাদে অনেককে বাগান করতে দেখা যায়, সেখানে টবে বা পাত্রে যেন জমা পানি পাঁচদিনের বেশি না থাকে, সেদিকেও যতœবান হতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

বসতবাড়ির বাইরে মশার বংশ বিস্তার রোধ 

১. ঘরের বাইরে মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ার ফলে পানি জমতে পারে। যেমন ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, কন্টেনার, মটকা, ব্যাটারির শেল, পলিথিন/ চিপসের প্যাকেট। এসব জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে। ২. মশা নিধনের জন্য স্প্রে বা ফগিং করতে হবে। ৩. বিভিন্ন রাস্তার আইল্যান্ডে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ফুলের টব, গাছপালা, জলাধার ইত্যাদি দেখা যায়। এখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলোতেও যেন পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে যতœবান হতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনে এবং বাড়ির বা ফ্ল্যাটের বেজমেন্টে যেন জমা পানি না থাকে।

ডেঙ্গু নিয়ে খুব স্বভাবতই জনমনে যেসব  প্রশ্ন জাগে

ডেঙ্গুজ্বরে কি কি পরীক্ষা কখন করা উচিত 

সাধারণত বেশি টেস্ট করার প্রয়োজন হয় না। সিবিসি এবং প্লাটিলেট কাউন্ট করলেই যথেষ্ট। এক থেকে দুই দিনের জ্বরে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং চার থেকে ছয় দিন পর এন্টি ডেঙ্গু এন্টিবডি করা যেতে পারে। প্লাটিলেট কাউন্ট চার বা পাঁচদিন পর কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর চার থেকে পাঁচ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। আবার অনেকেই দিনে দুই তিনবার, এমনকি একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন, যা অপ্রয়োজনীয়।

রক্ত দিতে হবে কি 

ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হলেই রোগী এবং চিকিৎসক উভয়েই রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ যদি রক্তক্ষরণ না হয় এবং রোগীর রক্তের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকে, তবে রক্ত পরিসঞ্চালন করার কোনো প্রয়োজন নেই।

প্লাটিলেট কি দিতেই হবে

ডেঙ্গুজ্বরের চার থেকে পাঁচ দিন পরে প্লাটিলেট কমতে থাকে, দুই থেকে তিন দিন পর তা বাড়তে শুরু করে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন হয় না। অনেক সময় প্লাটিলেট একটু কমে গেলেই রোগী এবং চিকিৎসক প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয়।

একবার ডেঙ্গু হলে আর কি হয় না

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ভিন্ন প্রজাতি বা সেরোটাইপ আছে, তাই চারবার ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটি প্রজাতি দ্বারা একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভবিষ্যতে সেই সেরোটাইপ দ্বারা আর আক্রান্ত হয় না। কারণ, শুধু সেই সেরোটাইপটিতে রোগীর আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু বাকি তিনটি প্রজাতি দ্বারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ঠিকই রয়ে যায়। তবে কেউ যদি পৃথকভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রজাতি দ্বারা জীবনে চারবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি জীবনে আর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।

মা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে কি॥ মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। কাজেই, আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ 

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে থাকা যাবে কি? ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে, একই তোয়ালে, একই গ্লাস কিংবা প্লেট ব্যবহার করলে অন্যদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় কোনো বাধা নেই।

এন্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে কি

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে এন্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগও থাকতে পারে, তখন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। অনেকে মনে করেন ডেঙ্গুতে এন্টিবায়োটিক ক্ষতি করতে পারে এবং তা পরিহার করতে হবে, যা একটি ভুল ধারণা। প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে রোগীর কোনো ক্ষতি হবে না।

গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু 

এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ, মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্যই এ সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ।

যেহেতু বর্তমান মৌসুমটা ডেঙ্গুজ্বরের আর মশার প্রকোপ এবং তার বংশবৃদ্ধি কমানো যায়নি, তাই যে কেউ এই সময়ে জ্বরে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুজ্বরের কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ জ্বর মনে করে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, অহেতুক অবহেলার কারণে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। তাই একটাই উপদেশ, জ্বর-ঠান্ডা-মাথাব্যথা দেখা দিলে দ্রুত ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে ফেলবেন। যত দ্রুত ধরা পড়বে, তত দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

ডেঙ্গুজ্বর হয়তো নির্মূল করা যাবে না, এর কোনো ভ্যাক্সিন কিংবা কার্যকরী ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। ডেঙ্গু মশা এবং তার বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ দুটোই আমাদের চারপাশে বিদ্যমান, তাই ডেঙ্গুজ্বরকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। ডেঙ্গু আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ডেঙ্গুজ্বরকে ভয় না পেয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করেই এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ করেই চলতে হবে। একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত থেকে মুক্তি সম্ভব।

লেখক:  ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, ইমেরিটাস অধ্যাপক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046818256378174