রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মুংলি দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদরাসায় শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ ২৭ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তারা এ রোগে আক্রান্ত হন।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহামারি আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবসী।
মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৫০ জন। শিক্ষক ও কর্মচারী ১৯ জন। এর মধ্যে দশম শ্রেণির ৫ জন, নবম শ্রেণির ৩ জন, অষ্টম শ্রেণির ৬ জন, সপ্তম শ্রেণির ৩ জন, ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জন। এ ছাড়াও ৪ জন শিক্ষক ও ২ জন অফিস সহকারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন মুংলি গ্রাম ও মাদরাসা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে আছে। বাজারের ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছ চারপাশে। মাদরাসার শৌচাগারটিও অপরিচ্ছন্ন। দেখেই বোঝা যায় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এর কোথাও হয়তো এডিস মশার বিচরণ আছে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।
মাদরাসার সুপার ইউসুফ আলী বলেন, আক্রান্ত ২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ জন চিকিৎসাধীন। চার শিক্ষক ও দুই অফিস সহকারীও আক্রান্ত হয়েছেন। এক শিক্ষকের সন্তান মারা গেছে এ রোগে। এত বেশি সংখ্যক শিক্ষক ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছেলে তৌহিদের হঠাৎ জ্বর আসে। ২৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসে। প্লাটিলেট খারাপ থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর ভোরে তৌহিদ মারা যায়।
স্থানীয়রা জানান, মুংলি গ্রামটিকে এখন ডেঙ্গুর রেডজোন বলা যায়। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তবে মাদরাসার সুপার জানিয়েছেন, স্কুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে তারা নিজেরাও উদ্বিগ্ন।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি জানান, প্রতিদিন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু মুংলি গ্রামেই ৮০-৯০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অথচ এখানে মশা মারার কোনো ব্যবস্থা নেই। নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাচ্ছেন। এ কাজে প্রশাসনের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।
শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দীন জানান, তাঁর পরিবারের ৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকরাও বাদ যাননি। মাদরাসার এক শিক্ষকের ১৩ বছর বয়সী সন্তানসহ এলাকার চারজন ডেঙ্গুতে মারা গেছে। সব মিলিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন যাচ্ছে তাদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, গত এক মাসে এ উপজেলায় ১৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৯টি শয্যার মধ্যে ২৭টিতেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। অন্যরা শয্যা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, এক মাদরাসায় এত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহেল হোসেন বলেন, মাদরাসা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে মাদরাসা কিছুদিন ছুটি ঘোষণা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, মুংলি গ্রাম ও ওই মাদরাসা থেকে এডিস মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হবে। গ্রামবাসীকে সচেতন করতে লিফলেট, মাইকিং, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ নানা কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।