ডেঙ্গুতে পরিবারপ্রতি ব্যয় ১৯ হাজার টাকা, গবেষণা - দৈনিকশিক্ষা

ডেঙ্গুতে পরিবারপ্রতি ব্যয় ১৯ হাজার টাকা, গবেষণা

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ছেলে ইয়াসির আরাফাতের ডেঙ্গু হওয়ার পর তাকে নিয়ে ১২ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল ইভা খাতুনকে। তাঁর বাসা রাজধানীর শ্যামলীতে। এত দিন হাসপাতালে থাকার কারণ, ছেলেটির অতিরিক্ত অসুস্থতা। ইভা এক নন, তাঁর বোন ও ভাই মিলে এই কয়েক দিন বাসা আর হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন।

ইভা বলেন, ‘অন্তত ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হইয়া গ্যাছে। বেশি পয়সা গ্যাছে টেস্টে। হাসপাতালের বাইরে থাইক্যা অনেক টেস্ট করতে হইছে।’

তিন সন্তানের মা ইভা একটি অফিসে রান্নার কাজ করেন। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ছেলেকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনেন। সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগাতে অনেকটাই ধারকর্জ করতে হয়েছে তাঁকে।

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছর চিকিৎসা, যাতায়াতসহ মাথাপিছু রোগীদের পেছনে পরিবারের ব্যয় ১৯ হাজার টাকার বেশি। এতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়ে গেছে মানুষের। অনেক পরিবার তাদের মাসিক আয়ের চেয়েও বেশি ব্যয় করে ফেলেছে ডেঙ্গুর চিকিৎসায়। অনেকেই ঋণ করেছেন, আবার কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করতেও বাধ্য হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রোগীর খরচ কমাতে সরকারি নানা তৎপরতা আছে। কিন্তু এরপরও রোগী বা তাঁদের পরিবারের ব্যয়ও কম হয়নি। সেই অবস্থা জানার চেষ্টাতেই এ গবেষণা হয়েছে।’

গবেষণায় সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল আর রাজধানীর ছয়টি বেসরকারি হাসপাতালের ১৬১ জন রোগীর খরচের হিসাব নেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ছিল ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজ। এসব হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হওয়া ১০ রোগীর মুঠোফোনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ চলে।

গবেষণার ফলাফল

গবেষণায় চলতি বছরের শুরু থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রোগীদের খরচের গড় হিসাব করা হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৯ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু নিয়ে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ লাখ ৩ হাজার ৯০৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৪ জন।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি তিন হাসপাতালের মধ্যে রোগীদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে—৩০ হাজার টাকা। এরপর মুগদা হাসপাতালে ২৪ হাজার আর বিএসএমএমইউতে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিন হাসপাতালের গড় খরচ ২৫ হাজার টাকা।

ঢাকার বাইরে রোগীদের গড় খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের খরচই গবেষণায় হিসাবে ধরা হয়েছে।

গত আগস্ট মাসের শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পেছনে সরকারি ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। আর ওই সময় পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৩০ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে। শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের শয্যা, পরীক্ষার খরচ এবং ওষুধ—সব দিয়েই ডেঙ্গু রোগীদের সহায়তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যাতে রোগীর খরচ কমানো হয়।

ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদেরও বাইরে টেস্টের জন্য খরচ করতে হয়েছে—গবেষণার এমন ফল সম্পর্কে ডা. নাজমুল ইসলাম বলছেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, যেন সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা যায়।

গবেষণা অনুযায়ী, বেসরকারি আনোয়ার খান মেডিকেল ও ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজে রোগীপ্রতি গড় খরচ হয়েছে ৫৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। তবে ছয়টি মেডিকেল মিলিয়ে গড় খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার বেশি।

সঞ্চয় ভেঙে, ধার করে চিকিৎসায় ব্যয়

সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ বলেছেন, কম খরচ হবে মনে করেই তাঁরা এসব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপরও ৮৩ শতাংশ বলেছেন, যে ব্যয় হয়েছে, তা তাঁদের জন্য বড় বোঝা। ৬৭ শতাংশ চিকিৎসার খরচ করেছেন ঋণ করে। সঞ্চয় ভেঙে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ১৭ ভাগ মানুষকে।

বেসরকারি হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরেই এসব হাসপাতালে গেছেন। ৫২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ঋণ করে হাসপাতালের বিল মিটিয়েছেন। ৪৫ ভাগ মানুষকে তাঁদের সঞ্চয় থেকে খরচ করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্পদ বিক্রি করেছেন ৩ শতাংশ মানুষ।

চিকিৎসা খরচ নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে মানুষের ওপর ডেঙ্গু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হয়ে গেছে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মানুষের পকেট থেকে এত ব্যয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি তুলে ধরে। কোভিডকালে অনেক মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। এর ওপর ডেঙ্গুর বোঝা তাঁদের আরও প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দিল।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058979988098145