দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংবাদ সম্মেলন করে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তমূলক, অসত্য, বেআইনি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ইউনূসের বক্তব্য গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটি পাঁচ লাখ সদস্য ও তাদের পরিবারের অধিকার খর্ব করার শামিল।
বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ব্যাংক মিডিয়া সেলের প্রধান মোছা. আঞ্জু আরা বেগমের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র ও ভূমিহীন সদস্যদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ। তারই অংশ হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের ১৫৫তম বোর্ড সভায় গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডে চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনূস বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কে ১৪ তলা টেলিকম ভবনে ‘গ্রামীণ পরিবারের’ আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের মতো করে চালাচ্ছে। পুলিশের কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
এই ভবন জবরদখলকারী কারা? পরিষ্কার করে জানানোর জন্য বলা হলে ড. ইউনূস বলেন, যারা এসেছে সবাই গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসেছে।
গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তনের বিষয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয়েছে। তাদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংক ও এই ব্যাংক কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিক দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটি পাঁচ লাখ ঋণগ্রহীতার স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অনৈতিক ও আইন পরিপন্থি। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, যার মালিক বাংলাদেশ সরকার ও এর ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারগণ। এমনকি এ বিষয়টি বাংলাদেশের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে।
ড. ইউনূসের পক্ষে বলা হয়েছে, সরকারি আদেশবলে তৈরি করা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক কখনোই আইনগতভাবে কোনো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি সৃষ্টি করা বা উহার মালিক হতে পারে না। এই বক্তব্য স্ববিরোধী ও আইনের অপব্যাখ্যার শামিল। কারণ ২৫-০৪-১৯৯৬ তারিখে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ড. ইউনূসের প্রস্তাবেই খোদ গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এইসব আইনি বিধান মেনেই গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ১৫৫তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট প্রতিনিধিগণ গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত ছয়টি প্রতিষ্ঠানে যান। সংবাদ সম্মেলনে তারা জবরদখলের অভিযোগ তুললেও প্রকৃত পক্ষে সেদিন তারা ব্যাংকের প্রতিনিধিগণকে সাদর অভ্যর্থনা জানান এবং আপ্যায়ন করেন। প্রতিনিধিগণ নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের চিঠি হস্তান্তর করেন।
গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ আশা করছে, গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর কল্যাণে এবং তাদের স্বার্থরক্ষার যে অঙ্গীকারে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বোর্ড সভার এ সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।