দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদার জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার মাড়গ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুদরাত-এ-খুদা মাড়গ্রাম এমই স্কুল এবং কলকাতা উডবার্ন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এই কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। রসায়ন শাস্ত্রে উচ্চতর গবেষণার জন্য মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ‘Stainless Configuration of Multiplanmet Ring’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কুদরাত-এ-খুদা প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিভাগীয় প্রধানের পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করে পুনরায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিরে আসেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) চলে আসেন এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জনশিক্ষা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৯-এ তিনি পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা সায়েন্স ল্যাবরেটরিজ)-এর পূর্বাঞ্চলীয় গবেষণাগারসমূহের প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন এবং ঢাকায় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পরিচালকের পদ থেকে অবসরগ্রহণের পর মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা ‘কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কুদরাত-এ-খুদাকে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত এই কমিশনের রিপোর্ট ‘কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি বাংলা ভাষায় অসংখ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে: বিজ্ঞানের সরস কাহিনী, বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনী, বিজ্ঞানের সূচনা, জৈব রসায়ন (চার খণ্ড), পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প সম্ভাবনা, পরমাণু পরিচিতি এবং বিজ্ঞানের পহেলা কথা।
বিশিষ্ট কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার তাকে ‘তমঘা-ই-পাকিস্তান’ এবং ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব প্রদান করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘একুশে পদক’ এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ প্রদান করে। বিজ্ঞানে নেতৃস্থানীয় অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুদরাত-এ-খুদাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।