দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্র-মধ্যবিত্ত। এর মধ্যে ১০ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থীর পরিবার হতদরিদ্র। এসব শিক্ষার্থীর পরিবারের মাসিক আয় ৪ হাজার টাকার কম। অন্যদিকে ভর্তিতে উচ্চ আয়ের পরিবারের সন্তানদের সংখ্যা ধীরগতিতে বাড়ছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থী ছিলেন ৫ শতাংশ যা গত বছর ২০২২-২৩ শিক্ষবর্ষে বেড়ে দাঁড়ায় ৮ শতাংশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিগত তিন বছরে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্বব্যাংকের 'পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮' শীর্ষক প্রতিবেদনে যাদের আয় দৈনিক ১.৯০ সেন্টের কম তাদের হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তথ্যমতে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষেতা ছিল ৬৬ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০২২-২৩ শিক্ষবর্ষে এই হার ছিল ৬০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের আয়ের হিসেবকে মানদণ্ড ধরে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে কারো দৈনিক আয় ১০ থেকে ২০ ডলার হলে সে মধ্যবিত্ত। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে যাদের আয় মাসিক ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা তারা মধ্যবিত্ত। সে হিসাবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর হার ছিল ১৪ শতাংশ। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তা ছিল ১৬ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তা ছিল ১৫ শতাংশ। আর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীর হার ছিল ৫ শতাংশ। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৭ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২-২৩ শিক্ষবর্ষে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৮ শতাংশে।
সমাজ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেই কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। সূচনালগ্নের উদ্দেশ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরে যায়নি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছে। অতীতেও প্রান্তিক পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। মেধার বিচারেই প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখনো নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অতীত থেকেই উচ্চ আয়ের পরিবারের সন্তানেরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় আস্থা পাচ্ছে বলে মনে হয় না।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম বলেন, সাংবিধানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল তা এখন প্রতিফলিত হচ্ছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সন্তানেরা এখানে পড়াশোনা করছে। যখন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন অত্যন্ত আনন্দ হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রান্তিক পর্যায় থেকেই এখানে আসে। ঢাকা শহরের ভালো কলেজগুলোতেও কিন্তু একই চিত্র। গত বছর প্রথম বর্ষের কয়েক জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বৃত্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের মধ্যে অনেকেই শুধু ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই প্রথম বার ঢাকায় এসেছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আমরা বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে তাদের মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।