হিজাব ইস্যুতে ফের প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নারী শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল সোমবার (৫ জুন) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। হিজাব ইস্যুতে বাংলা বিভাগের নোটিশের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় উপাচার্যের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে এ সমাবেশের ডাকা হয়েছে।
শনিবার (০৩ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম বিনতে মোহাম্মদ উল্লাহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তাবাসসুম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমগ্র বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য রোল মডেল। এমতাবস্থায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম অর্থডক্স চিন্তাভাবনায় মুসলিম নারী সমাজ ব্যথিত। আধুনিকায়নের এই যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিকতার সর্বোচ্চ প্রমাণ রাখবে এই আশা রাখাই যায়।
‘‘পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য মুসলিম নারীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা সংবিধানের ৪১নং অনুচ্ছেদের (যেখানে ধর্ম পালনে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’’
তিনি আরও বলেন, পরিচয় শনাক্তকরণের পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। মুখ খোলা রাখাই যদি পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য যথেষ্ট হতো; তাহলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাজিদুল কবির তিনবছর ছাত্রত্ব ছাড়াই বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হতো না। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করেও ব্যক্তি শনাক্তকরণ সম্ভব বলে মনে করছি।
পরিচয় শনাক্তকরণের দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিৎ বলে মনে করেন তাবাসসুম। তিনি বলেন, বায়োমেট্রিকস পদ্ধতিতে শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা। অপরটি হলো নারী শিক্ষিকা বা নারী স্টাফ দ্বারা পরীক্ষার পূর্বে নির্জনস্থানে ছাত্রী শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা।
এসময় তিনি এই দাবি আদায়ের সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।
এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করতে হবে;
পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষার পূর্বেই নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে; দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্থা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে।
বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা অথবা কটূক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের শ্রীলতাহানি করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে; হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় বারে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তের সুবিধার্থে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে শিক্ষার্থীর কান–মুখ খোলা রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দেওয়া বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টে আদেশ দিয়েছিলেন। গত ২৯ মে হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে এখন একজন নারী শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনের সময় পরিচয় নিশ্চিত করতে মুখ ও কান খোলা রাখতে হবে।