শিক্ষার্থীদের দাবি ও অ্যাকাডেমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বর্ষে শিক্ষার্থীদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে জিপিএ-সিজিপিএ শর্তে পরিবর্তন আনছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ এবং সাত কলেজ অভিন্ন নীতিতে চলবে। তবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশন দিতে নারাজ ঢাবি কর্র্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় জিপিএ-সিজিপিএ শর্তের বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদে সর্বনিম্ন ২.০০ জিপিএ-সিজিপিএ পেলে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া ২.২৫ করার আলোচনাও রয়েছে, যা বর্তমানে অনুষদ ও বর্ষভিত্তিক ভিন্ন রয়েছে। প্রস্তাবটি আরও পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উঠবে এবং সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঢাবির সিনেট ভবনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাবি ও কলেজ প্রশাসনের যৌথ বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সাত কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিরাও এ প্রস্তাবনা দেন। পরে সাত কলেজেও অভিন্ন নীতির বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাবির বিভিন্ন অনুষদে এক বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের জন্য সিজিপিএর বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। কলা অনুষদের সব বর্ষেই প্রমোশনের জন্য সর্বনিম্ন ২.০০ পেতে হয়, বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষে ২.০০ এবং অনার্স ডিগ্রিপ্রাপ্তির জন্য সিজিপিএ ২.৫০ পেতে হয়। বাণিজ্য অনুষদে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে জিপিএ ২.০০, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে ২.২৫ এবং চতুর্র্থ বর্ষ এবং ডিগ্রিপ্রাপ্তির জন্য সিজিপিএ ২.৫০ পেতে হয়। এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে জিপিএ ২.০০, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে ২.২৫, তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে ২.৫০ এবং অনার্স ডিগ্রি লাভের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ২.২৫ পেতে হয়। প্রস্তাবনা চূড়ান্ত রূপ লাভ করলে সব অনুষের জন্য অভিন্ন নীতিমালা থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিন বলেন, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সব অনুষদের শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে পাস করে বের হতে পারে সেজন্য জিপিএ-সিজিপিএর শর্ত অভিন্ন এবং সহজ করা হচ্ছে। সব অনুষদে এটি ২.০০ কিংবা ২.২৫ করা হতে পারে। ডিনস কমিটির সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পর্যালোচনা করা হবে এবং সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশন দেওয়ার দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট তারা। আন্দোলনের মাঠ থেকে পুরোপুরি সরে গেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়নের সুযোগের জন্য অনুরোধ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে সাত কলেজ আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহমুদ অপু বলেন, আমাদের জন্য সিজিপিএ শর্ত শিথিল করার কথা জানিয়েছেন সাত কলেজের সমন্বয়ক। এটা আমাদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা চাই এটা কার্যকর হোক। তবে তিন বিষয় মানোন্নয়নের সুযোগ চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত ফল প্রকাশের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ সমস্যাটা দূর হলে আমাদের অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যাবে।
সাত কলেজের সমন্বয়ক ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য বলেন, সাত কলেজের বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে এক বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের জন্য সিজিপিএর বিভিন্ন শর্ত ছিল। গতকালের মিটিংয়ে সাত কলেজের পক্ষ থেকে সব বর্ষে অভিন্ন সিজিপিএর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সেটি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সিজিপিএর অনুরূপ, যা প্রাথমিকভাবে সবার আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা প্রমোশনের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ২.০০ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন একেক অনুষদে একেক নিয়ম রয়েছে। ফেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে, জরিমানা দেওয়া এসব ভোগান্তি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এগুলো বহুলাংশে কমে যাবে। সাত কলেজের জন্যও একই সিদ্ধান্ত থাকবে। তবে তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশনের সুযোগ নেই।