কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ভাঙচুর করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকটি আবাসিক হলের কক্ষ। প্রশাসনের ধারণা, হামলাকারীরা ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মী। তারা মুখে গামছা বেঁধে ও মাস্ক পরে হামলা চলায়।
আর রাতে প্রভোস্টদের অনেকটা জিম্মি করে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ নানা শর্তযুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়া হয়। ঢাবি সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তছনছ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন আবাসিক হলের শত শত কক্ষ। ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগও করা হয় শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত আসবাবপত্রে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। শুধু তাই নয়, এসব ভাঙচুর করা কক্ষ ও স্থাপনা সংস্কার বিশ্ববিদ্যালয় খোলাই এখন প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জানা যায়, দিনেদুপুরেই অনেক হলে হামলার ঘটনা ঘটে। তাহলে কারা এ হামলা করলো এবং কেন হল প্রশাসন হামলা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেনি -- এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। প্রভোস্টরা বলছেন, হামলার সময় তারা হলেই ছিলেন। তবে হামলাকারীরা নিজেদের ছাত্র বলে দাবি করলেও পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। বিভিন্ন সময় নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হল থেকে বের হয়ে যাওয়া ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কর্মীরাই হলে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে ধারণা হল প্রশাসনের।
হামলাকারীরা সবাই মুখে গামছা বেঁধে বা মাস্ক পরে ছিল বিধায় তাদের চিহ্নিত করা যায়নি জানিয়ে প্রভোস্টরা বলছেন, অনেক মেয়ের মুখ ঢাকা ছিল। কারও মুখে মাস্ক ছিল, কারও মুখে গামছা বা রুমাল বাঁধা ছিল। এমন লোকজনই রুমে ভাঙচুর চালিয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, হলের ছাত্র কিনা। বলেছে, জ্বি স্যার। কত নম্বর কক্ষে থাকেন, সেটা জানতে চাইলে বলেন, ছিলাম কিন্তু এখন বের হয়ে গেছি। এখন আবার এসেছি। যারা হলের আবাসিক ছাত্র, তারা দেখা গেছে, যেকোনো কারণে হলের বাইরে থাকে। সে হতে পারে ছাত্রদল করে বা ছাত্রশিবির করে। তো এখন তারা হলে আসার সুযোগ পেয়ে এসেছে!
গত ১৭ জুলাই রাতেই একযোগে ছাত্রীদের সব হলেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ হলের প্যাডে নানা শর্তযুক্ত বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রভোস্টরা বলছেন, হলে থাকা ছাত্রলীগ নেত্রীদের মেরে ফেলা হবে বা ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হবে বলে তাদের ভয় দেখানো হয়। ফলে অনেকটা জিম্মি করে এসব বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন তারা। রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. নীলুফার পারভীন বলেন, একজন হল প্রভোস্টের পক্ষে রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব না। তারা দাবি নিয়ে আসে। তাদের সবার মুখ ঢাকা ছিল। আমাদের ব্যাপারটা হচ্ছে, রক্তপাত এড়ানো আর জীবন বাঁচানো। এজন্যই আমি স্বাক্ষর করি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানিয়েছে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।