ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার থেকে সেই ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে। কার্যকারিত হওয়া সেই ভাড়া নির্ধারিত পোশাকে থাকা ১০০ রিকশা মানলেও অধিকাংশ অনির্ধারিত রিকশাচালক তা মানছেন না।
গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। অনির্ধারিত রিকশাচালকদের দাবি, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বাড়তি সেখানে রিকশার ভাড়া কমিয়ে আমাদের পেটে লাথি মারা ছাড়া আর কিছুই করা হয় নি।
মো. জাফর নামে অনির্ধারিত এক রিকশাচালক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ১ কেজি ভেন্ডির (ঢেঁড়শ) দাম ১২০ টাকা, সারাদিনে রিকশার জন্য জমা দেয়া লাগবে ১৫০ টাকা, দৈনিক বাড়ির খরচ ৪০০ টাকা, আবার খাবার ২০০ টাকা। এরপর সপ্তাহে কিস্তি চালাতে হবে।
আরেক রিকশাচালক বলেন, এটি আমি মানি না। ১০ টাকা, ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে কি হবে? সারাদিন যদি টিএসসি থাকি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হওয়াই অনেক মুশকিল। এই ভাড়ায় খাঁটার চেয়ে দূরের ভাড়ায় যাওয়া ভালো। তখন টাকাও এর চেয়ে বেশি পাবো। ভাড়া কমিয়ে আমাদের পেটে লাথি মারা ছাড়া কিছুই করা হয় নি। দ্রব্যমূল্যের দাম কমান অটো সব কমে যাবে।
এদিকে নির্ধারণ করে দেয়া এমন ভাড়ার তালিকা বেশি দিন চলবে না বলে মন্তব্য আনেয়ারুল ইসলাম নামে আরেক রিকশা চালক। আনেয়ারুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এটি বেশি দিন থাকবে না। আমরা একসময় ৫ টাকা দিয়ে শাহবাগ, পলাশী, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বর গেছি। কিন্তু এখন তো সব জিনিসপত্রের অনেক দাম। দিনের ও যুগের ব্যবধানে পিঁয়াজ যেটা গত সপ্তাহে ৪০ টাকা দিয়ে কিনছি, সেটা এখন ৮০ টাকা। চাল কিনলাম ৬০ টাকা, এখন ৭০ টাকা।
তিনি আরো বলেন, ‘ইনভার্সিটির এ নিয়ম থাকবো? এটা থাকবে না। দু’একদিন যাউক এমনি দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাইবো। যেখানে আগে সুফিয়া কামাল হলে যাওয়ার ভাড়া আগে ছিলো ৩০ টাকা, সেখানে এখন ৩৫ টাকা। এটা কি পোলাপান জানে? আমার মনে হয় জানে না!’
এদিকে নির্ধারিত পোশাকে বেশ কয়েকজন রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা হলে, তারা জানান আমরা সবাই এ নির্ধারিত ভাড়াতে যাত্রী আনা নেয়া করছেন। তাঁদের একজন সোহেল আহম্মেদ, যিনি ২২ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, নির্ধারিত ভাড়াতে সকাল ১০ টাকায় থেকে ভাড়া খাটছি। এখন পর্যন্ত আমরা ১০০ জন চার্টের ভাড়ায় খ্যাপ মারছি। তবে ধারণা করছি আরো রিকশাচালক আসবে।
নির্ধারিত ভাড়ায় আসা অনেক শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রাইসা তাবাসসুম এক শিক্ষার্থী বলেন, আগে টিএসসি থেকে কার্জন যেতে ৩০ টাকা লাগতো, সেখানে ১৫ টাকা দিয়ে যেতে পেরেছি। এমন উদ্যেগ সত্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে মোট ১৬টি স্টপেজ ধরে নির্বাচিত ১৬টি স্থানে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন বোর্ড স্থাপন করা হয়পছে। প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত পোষাক পরিহিত ১০০ জন চালক এই ভাড়া মেনে শিক্ষার্থীদের পরিবহন করবেন এবং ধারাবাহিকভাবে অন্যরাও এই কার্যক্রমের আওতায় চলে আসবেন।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাসে রিকশার জন্য একটি ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাই সকল রিকশাচালকদের উচিত হবে এ ভাড়া মেনে রিকশা চালানো। যারা এ নির্ধারিত ভাড়ায় রিকশা চালাবে, তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। সেই সঙ্গে তাদের আমরা উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে তাঁরা যেন ওই নির্ধারিত ভাড়া মেনে রিকশাচালকদের টাকা দেয়।