দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে এই রাজনীতি নতুন না। যাকে মারবে সে শিবির, যে কোনো অন্যায় করবে, যে কোনো অপরাধ করবে সবকিছু ঢাকা হয় শিবির ট্যাগ দিয়ে। আমরা ছাত্রলীগ কিংবা সরকারকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের যদি এতই শিবিরভীতি থাকে তাহলে আইন করে শিবিরকে নিষিদ্ধ করেন না কেন?
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় ঢাবির আইন অনুষদের সামনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর বিচার চেয়ে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে আসিফ নজরুল বলেন, ধারণা করে, মিথ্যা অভিযোগ করে কাউকে মারতে পারেন না আপনারা। এটা গুরুতর অপরাধ, ফৌজদারি অপরাধ। আমি অনেক খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমাদের যেসব শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে তারা শিবির কেন, কোনো সংগঠনের সঙ্গেই জড়িত নয়। আমি মনে করে তাদের শিবির করার জন্য মারা হয়নি, তাদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য। বাংলাদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় সমাবেশ করবে সেটার জন্য মার খাবে সেটার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম?
ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে যারা ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারা আছে তারা সবাই আইন বিভাগের ছাত্র। আমি তোমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে আপিল করছি। তোমরা কি মনে কর ইসলামী মাফফিল করার জন্য বহিরাগত ছাত্রলীগের গুণ্ডারা তোমাদের জুনিয়রদের মারার অধিকার রাখে? তোমাদের ছোট ভাইদের রক্তাক্ত চেহারা দেখে কি তোমাদের মনে কোনো বেদনার উদ্রেক হয় না? তোমাদের কাছে আপিল করলাম- এসব বহিরাগত গুণ্ডাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার কর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কি ভূমিকা রাখছেন, এ প্রশ্ন রেখে গেলাম।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান। মানববন্ধনে হামলার শিকার হওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাফওয়ান বলেন, আমাদের এই প্রোগ্রামে হামলা হবে আমরা ভাবতেও পারিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস বলে আমরা যেটাকে মনে করি সেখানে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতারা এসে আমিসহ আমার সহপাঠীদের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করে। আমরা জানি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যারা আছেন তারা আমাদের বিভাগের। তাদের বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও যদি আমাদের এভাবে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হতে হয় আর তারা তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা কিভাবে তাদের সিনিয়র ভাই মনে করব। আমরা এ হামলার কঠিন বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে রোজা নিয়ে আলোচনার জেরে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে ঢাবি ছাত্রদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এতে আইন বিভাগের পাঁচ ছাত্র গুরুতর আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের বাসভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেটের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলা করা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল সুজন এসে তাদের হুমকি-ধমকি দেন এবং সুজনের নেতৃত্বেই বের হয়ে যাওয়ার সময় ভবনের মূল ফটকের সামনে থেকে প্রায় ৪৫-৫০ জন তাদের ওপর হামলা করে এবং পরে বাইক নিয়ে চলে যায়।