তারেক রহমানের অর্থপাচার মামলার রায় লিখে পাঠান দুলাল - দৈনিকশিক্ষা

তারেক রহমানের অর্থপাচার মামলার রায় লিখে পাঠান দুলাল

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অর্থপাচারের মামলায় সাজা দিতে রায় লিখে পাঠান তৎকালীন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরবর্তীতে আইন সচিব) আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল। কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে নিজের লেখা রায়ই ঘোষণা করেন ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন। রায়ে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। এ ঘটনায় চাপের মুখে একপর্যায়ে দেশছাড়তে বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ফিনল্যান্ডে রয়েছেন সাবেক এ বিচারক। গতকাল রবিবার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে ওই মামলার
রায় ঘোষণার আগের ও পরের নাটকীয় ঘটনা আমাদের সময়কে জানান মো. মোতাহার হোসেন।

ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের সাবেক এ বিচারক বলেন, ‘২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর ওই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি গ্রহণ করি। ওই দিন রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করি। ১৪ নভেম্বর বাসায় বসে রায় লিখে ফেলি। সেখানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই উল্লেখ করে তাকে খালাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পর দিনই (১৫ নভেম্বর) গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বাসায় আসে। আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল তাদের পাঠিয়েছেন বলে জানান। তারা বলেন, সন্ধ্যায় বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের বাসায় যেতে হবে। সেখানে তিনি (দুলাল) আসবেন।’

মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাস আমার বন্ধু মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি। ফৌজদারি মামলায় তার অনেক অভিজ্ঞতা ছিল। তাই মাঝে মধ্যে ফৌজদারি মামলার রায় দেওয়ার আগে তার সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আলাপ করতাম। তিনি অনেক ভালো বুঝতেন। তারেক রহমানের মামলা নিয়েও তার সঙ্গে একাধিকবার আলাপ করেছিলাম। তবে আলাপকালে তারেক রহমানের নাম বলিনি। যাতে আসামি কে বুঝতে না পারে। বন্ধু মানুষ হওয়ায় গোয়েন্দাদের কথানুযায়ী সন্ধ্যার দিকে আশিষ রঞ্জন দাসের বাসায় যাই। কিছু সময় পর সেখানে তৎকালীন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) বিকাশ কুমার সাহা এবং আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল আসেন। সবার হাতে অস্ত্র। বিচারপতির সামনেই দুলাল ও বিকাশ কুমার সাহা অস্ত্র হাতে নিয়ে নাড়াচড়া করতে থাকেন। দুলাল বলেন, তারেক রহমানকে সাজা দিতে হবে। না হলে আমাদের কারও রক্ষা নেই। পিস্তলে গুলি লোড আছে, একবার টিগার চাপলে ৮/১০টা গুলি বের হবে। যে করেই হোক তারেক রহমানকে সাজা দিতেই হবে। দুজনের হাতে অস্ত্র দেখে বিচারপতি নিজেও ভয় পেয়ে যান। তখন আমি বলি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমাল সাক্ষী ছাড়া কোনও সাক্ষী একটি কথাও বলেনি, কীভাবে তাকে সাজা দিই। এ কথা বলার পর বিচারপতির উদ্দেশ্যে দুলাল বলে ওঠেনÑ স্যার রায় লিখে দেবে আপনি (মোতাহার হোসেন) শুধু আদালতে পাঠ করবেন। এ কথা বলার পর বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাস বলেন, আমি কীভাবে লিখব, আমি মামলা সম্পর্কে জানি না। তখন দুলাল বলেন, তাহলে মোতাহার সাহেবই লিখবেন। তার লিখতে সমস্যা হলে আমি লিখে পাঠাব। কাল (১৭ নভেম্বর) বাসায় কম্পিউটারসহ একজন টাইপিস্ট দিয়ে পাঠাব। তাকে ডিক্টেশন দিলে সে লিখে নেবে। এসব বলে তারা চলে যায়। আমিও বাসায় চলে যাই। পর দিন বাসায় একজন টাইপিস্ট আসে। তাকে কিছু ডিক্টেশন দেওয়ার পর কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়। যতটুকু সে নিয়েছে ওই অবস্থায় চলে যায়। পর দিন ছিল রায় ঘোষণার দিন। সকাল ৯টা দিকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বাসায় আসে আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলালের হাতে লেখা একটি রায় নিয়ে। সেটি শুধু একটা আদেশ, যেখানে তারেক রহমানের ৭ বছরের কারাদ- এবং ২০ কোটি টাকা অর্থদ-ের বিষয়টি লেখা ছিল। আমি দুলালের লেখা রায়ের পাশাপাশি লুকিয়ে আমার লেখা রায়টিও আদালতে নিয়ে যাই। পরে নিজের লেখা রায়ই পড়ে তারেক রহমানকে খালাস দিই।’’

বিশেষ জজ আদালতের সাবেক এ বিচারক বলেন, ‘ধারণা করেছিলাম খালাসের রায় ঘোষণার পর আদালতে আমাকে নাজেহাল করতে পারে। তাই আগেই সব ঠিক করে রেখেছিলাম। রায় ঘোষণা করে এবং তাতে স্বাক্ষর করে খাসকামরায় ঢুকেই বেরিয়ে পড়ি। সরকারি গাড়িতে ওয়ারী পর্যন্ত গিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিই। ওয়ারী থেকে ছেলেসহ এয়ারপোর্টে চলে যাই। সেখানে স্ত্রী ও আরেক ছেলে আগে থেকেই ছিল। সবাই মিলে আত্মগোপনে চিটাগং চলে যাই। সেখান থেকে রাঙামাটি। এরপর যাই কক্সবাজার। আর মিডিয়ায় পর্যবেক্ষণ করতে থাকি রায় নিয়ে কি হচ্ছে। চার দিন পর ফিরে এসে ২২ নভেম্বর আদালতে বিচারকাজ শুরু করি। ওই দিনই দুদকের তৎকালীন প্রসিকিউটর (পরে আইনমন্ত্রী) আনিসুল হক ও মোশারফ হোসেন কাজল এজলাসে আসেন এবং আমাকে গালাগাল করে বলেন, কত বড় বুকের পাটা খালাস দিয়ে আবার আদালতে এসেছে। এসব বলে তারা চলে যায়। আমি ২/১ দিন আদালতে আসা বন্ধ রাখি। এরপর আবার আদালতে আসি। তখন এক মাসের মতো আমার চাকরি ছিল। এভাবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালতে এসে বিচারকাজ করি। এর মধ্যে জানতে পারি, চাকরিরত অবস্থায় আমাকে তারা কিছু করবে না। অবসরে যাওয়ার পর আমাকে অপহরণ করবে। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমি ৩০ ডিসেম্বর সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে ৭ দিন আত্মগোপনে থাকি। সেই ৭ দিন আমি কোথায় ছিলাম আমার পরিবারের লোকজনও জানতে পারেনি। ওই সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা সংগ্রহ করে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়া চলে যাই। কিছু দিন থাকার পর বুঝতে পারি এখানেও আমি নিরাপদ নই। কারণ মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি গোয়েন্দা ও ইন্ডিয়ান র-এর এজেন্টরা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে সরকারবিরোধ বাংলাদেশিদের দেশে পাঠিয়ে গুম করে ফেলে। এ রকম একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণের পর নিরাপত্তার স্বার্থে ফিনল্যান্ডে চলে যাই। এরপর থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ে এখানে আছি।

দেশে আসার বিষয়ে মোতাহার হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য মন ছুটে আছে। কিন্তু নিরাপত্তা শঙ্কায় এখনো এখানেই আছি। বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান ‘র’-এর এজেন্টের অভাব নেই। তা ছাড়া আমার পাসপোর্ট নেই। অবশ্য আমার ছেলে দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে আমাকে বলা হয়েছেÑ যখনই দেশে যেতে চাই, তখন তারা ব্যবস্থা করবে। নিজেকে নিরাপদ মনে করলেই দেশে চলে আসব।’ তিনি বলেন, ‘বিচারক হিসেবে অনেক বড় বড় মামলার রায় ঘোষণা করেছি। কোটি কোটি টাকার অফার এসেছে। কখনো আপস করিনি, নীতি বিক্রি করিনি।’

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037448406219482