কোটা আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজেও তাণ্ডব চালিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন। দুষ্কৃতকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে কলেজটির এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৯০ লাখ টাকার মালপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ ৫০০টি ছবি এবং জাতীয় চার নেতাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের দেড়শ ছবি। রাজধানীর বনানী থানায় করা একটি মামলার এজাহারে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কলেজের শিক্ষক মালেকা আক্তার বানু বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৫০০-৭০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের দুষ্কৃতকারীরা নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। কলেজের মূল গেট বন্ধ ছিল। এ সময় তারা গেট লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
একপর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। জাতীয় পতাকা মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি, ক্যাম্পাসের ৪০টি সিসি ক্যামেরা, অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ, উপাধ্যক্ষের অফিস কক্ষ, চেয়ার টেবিল, কম্পিউটার, প্রিন্টার ভাঙচুর করে। কলেজের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ছাত্র সংসদের তিনটি কক্ষেও ভাঙচুর চালানো হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু কর্নারে রাখা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, জাতীয় চার নেতাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আনুমানিক ১৫০টি ছবি, জাতির পিতার দুর্লভ প্রায় ৫০০টি ছবি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৫০০টির অধিক বইসহ টেবিল, চেয়ার, লাইট, সিসি ক্যামেরা, আইপিএস, কলেজের সেন্ট্রাল ইন্টারনেট সার্ভার, শেখ রাসেল পুষ্প কানন, জয় বাংলা মুক্ত মঞ্চ, কলেজের ছাত্র পরিবহনের একটি বাসের গ্লাস এবং পুরোনো বিজ্ঞান ভবনের নিচ তলার চারদিকে কাচের গ্লাস পরিবেষ্টিত সব জানালা ভাঙচুর করে।
এতে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ থেকে তিনটি মনিটর, চারটি হার্ডডিস্ক, ছাত্র সংসদের কক্ষ থেকে একটি ডেস্কটপ, দুটি ল্যাপটপ, একটি টেলিভিশন, চারটি সিলিং ফ্যান, ছয়টি স্ট্যান্ড ফ্যান, চারটি টেবিল ফ্যান, দুটি আলমারি, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সরঞ্জাম, পানির ফিল্টার, তৈজসপত্রসহ অনুমান ৫০ লাখ টাকার মালপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ওইদিন রাত ১০টার দিকে আসামিরা কলেজের শহীদ আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনতলা ভবনের ৪৬টি কক্ষের দরজা, জানালা, শিক্ষার্থীদের চেয়ার, টেবিলসহ আসবাব, ছাত্রাবাসের ভেতরে পার্কিংয়ে থাকা ১২টি মোটরসাইকেল, ১০টি বাইসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া ৪০টি ল্যাপটপ, পাঁচটি ডেস্কটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৫০টি টেবিল ফ্যান, ৪৬টি সিলিং ফ্যান, দুটি টেলিভিশন এবং ২০টি দেয়াল ঘড়ি, শিক্ষার্থীদের ড্রয়ার ভেঙে টাকাসহ ৪০ লাখ টাকার মালপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মালেকা আক্তার বানু বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা দুঃখজনক। যেভাবে হামলা করে ক্ষয়ক্ষতি ও মালপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে, তা প্রত্যাশিত না। আমরা দোষীদের বিচার চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বনানী থানার উপপরিদর্শক বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। তবে গ্রেফতারের অভিযান চলছে।