দীর্ঘ তিন বছরেও শেষ হয়নি ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের নির্মাণকাজ। ফলে বঙ্গবন্ধৃ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে না পেরে হতাশ শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে এবং কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই কাজ শেষ হয়নি।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক থেকে অনুদান পাওয়া ২৫ লাখ টাকা দিয়ে বাকৃবির বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। এই টাকায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিচতলায় একটি কক্ষের ডেকোরেশন ও চারটি এসি বসানো হয়। কাজটি করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় টেন ডিরেকশন ইন্টেরিয়র নামে একটি ফার্মকে। নামমাত্র এই কাজটুকু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও বরাদ্দ না দেওয়ায় বর্তমানে বন্ধ আছে নির্মাণকাজ। তবে দীর্ঘ তিন বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার দাবি করেন তারা।
বাকৃবির কৃষি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ ফয়সাল বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে পারছি না। দ্রুতই এর নির্মাণকাজ শেষ করা প্রয়োজন।’
ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিনা শারমিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র রয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মৃতি সংরক্ষণে “বিজয় একাত্তর” নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। তবে যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এখনও “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি এটি আমাদের হৃদয়ে কষ্ট দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা হলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারবে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে পারবে।’
হর্টিকালচার বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ বলেন, ‘আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগেই বঙ্গবন্ধু কর্নারের কাজ শেষ হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও গ্রন্থাগারিক খাইরুল আলম নান্নু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার করার জন্য সোনালী ব্যাংক থেকে ২৫ লাখ টাকার অনুদান পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজ শেষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইন্টেরিয়র ফার্ম টেন ডিরেকশনকে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। চারটি এসি কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ টাকায় এবং দেড় লাখ টাকার সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এই কাজ শেষ করার পর অর্থের অভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণকাজে পাঁচবার বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছে। তবে সর্বশেষ কমিটি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে কাজ শুরু করেছে।’
সোনালী ব্যাংকের দেওয়া অনুদানের টাকায় কাজ চলমান আছে দাবি করে উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর এমদাদুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করে এর উদ্বোধন দেখতে চান শিক্ষার্থীসহ ময়মনসিংহবাসী।