ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গল নিকারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। অভিযোগটি তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) সাইদুর রহমান স্বপন ও মো. কামরুজ্জামান রেজা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, গতকাল রোববার স্কুলে এসে বাংলা বই হারিয়ে ফেলেন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রেজোয়ান ইসলাম লিমন। পরে সে প্রধান শিক্ষক সেলিম হোসাইনের কাছে একটি বাংলা বই চাইলে তিনি লিমনকে হাতপাখা দিয়ে পেটানো শুরু করেন। একপর্যায়ে পাখাটি ভেঙে যায়। খবর পেয়ে লিমনের মা লিজা বেগম বিদ্যালয়ে ছুটে গেলে প্রধান শিক্ষক মারধর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
অভিভাবকরা আরো জানান, সপ্তাহ দুই-এক আগে ঝাড়ু বানানোর জন্য লোটাস নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রকে নারিকেলের শলাকা আনতে বলা হয়। ওই ছাত্র শলাকা আনতে না পারায় শিক্ষকদের ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এরপর বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে সহকারী শিক্ষক মো. ফেরদৌস তাকে ধরে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। এসময় সাবিহা সুলতানা নামে আরেক সহকারী শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে পিটুনি দেন। এছাড়াও দ্বিতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (দ্বিতীয় সাময়িক) পরীক্ষার পরদিন বিদ্যালয় না যাওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাজিন গাজিকে বেত দিয়ে পেটান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনো নিয়ম না মেনে প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইন তার ইচ্ছেমতো স্কুল চালাচ্ছেন। নিজের মতো করে আসেন, ছুটিও দেন ইচ্ছেমতো। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল নয়টায় বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর নিয়ম থাকলেও কয়েকজন শিক্ষক আসেন ১০টা-১১টার দিকে। বিদ্যালয়ে এসে কোনো রকমে দু-একটি ক্লাস নেন। এরপর বাড়ি যান তারা।
তারা আরো অভিযোগ করেন, এ বিদ্যালয়ে ছোট ছোট শিশুদের শাসনের নামে চলে পিটুনি আর গালিগালাজ। কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে শিক্ষকদের এমন নির্মম আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না। এতে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে শিশুরা।
জানতে চাইলে বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মো. ফেরদৌস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, লোটাস নামে ওই ছাত্রকে রাস্তা থেকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়েছিলাম। তখন সাবিহা ম্যাডাম তাকে ধমক দিয়েছে। তবে মারধর করেননি।
অন্যদিকে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে করা এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থী লোটাসকে মারধরের অভিযোগ সহকারী শিক্ষিকা সাবিহা সুলতানাও অস্বীকার করেছেন।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মারধরের অভিযোগ সত্য নয়। এটিও স্যাররা তদন্ত এসেছিলেন, আমি আমার বক্তব্য লিখিত আকারে তাদের কাছে জমা দিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটককে বলেন, মারধরের ব্যপারে গত বৃহস্পতিবার একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির তদন্তে দুইজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই বিদ্যালয়ের পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তা পাঠানো হবে। তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।