দৈনিকশিক্ষাডটকম, সাভার : নানা অভিযোগে জর্জরিত শিক্ষাখাতের দায়িত্ব গ্রহণের পরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনবেন বলে জানালেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ঝরে পরার হার কমাতে নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি। আর শিক্ষাখাতের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সবার সুযোগ নিশ্চিত করার বার্তা দিয়ে বললেন, শিক্ষকদের বেতন নিয়ে কম্প্রোমাইজ করা চলবে না।
শুক্রবার সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
নতুন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, যা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আছে। সেটা নানান ধরণের কাজ সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ও পুরো প্রক্রিয়াটাকে কর্মমুখী করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এক সময় শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মমুখী হবে সে আলোচনাটা আমরা করতাম না। বৃত্তির সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্কটার জায়গায় কিছুটা দুরত্ব ছিলো, সেই কাজগুলো ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
শিক্ষাখাতে সুশাসন নিশ্চিত করার বার্তা দিয়ে গত মেয়াদের শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে এ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া চট্টলবীরপুত্র বলেন, শিক্ষার মতো পবিত্র জায়গায় সেবা যারা নিতে যান তারা যাতে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে পড়ে হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষাখাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান পরিস্কার করে নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরো বলেন, এখানো অনেক অভিযোগ আছে, বিশেষ করে দুর্নীতির জায়গায়। দুর্নীতিটা আমারা যাতে নিরসন করতে পারি। সাধারণ মানুষ সেবা নিতে গিয়ে যাতে হয়রানির শিকার না তা হন তা নিশ্চিত করা আরেকটি চ্যালেঞ্জ। ট্রান্সফার, পোস্টিং, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড, প্রকল্প নানা জায়গায় আমাদের সাধারণ মানুষের অভিযোগ আছে, শিক্ষাবিদদের অভিযোগ আছে, রাজনীতিবিদদের অভিযোগ আছে সেগুলো যথাযথভাবে নিরসন করা, দুর্নীতির প্রশ্ন নিরসন করা ও দুর্নীতির জায়গায় কঠোর হওয়া আমি মনে করি খুব প্রয়োজন। এ সরকার সুশাসনের জায়গাটাকে খুবই গুরত্ব দিচ্ছে। শিক্ষাখাতে সুশাসন আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, বছরে প্রায় প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায় শেষ করে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার সময় দেখা যায় সেটি বিশ লাখ হয়ে গেছে। প্রায় এক কোটি আশি লাখ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের পূর্ণ পর্যায় শেষ করতে পারে না। সেজন্য আমরা অদক্ষ শ্রমিক বা কর্মী হিসেবে বিদেশে যায় বা বাংলাদেশের নানা সেক্টরে কাজে থাকি। আমরা যদি এ বিরাট অংশকে অন্তত পনোরো বছর পর্যন্ত ন্যূনতম নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাটা নিশ্চিত করতে পারতাম, তাহলে কিন্তু কর্মসৃজনের জায়গাটাও অনেকটা ইমপ্রুভ হতো এবং ভালো কর্ম তারা পেতেন দেশেই অনেক বিনিয়োগ করার সুযোগ হতো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের।
নতুন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চাই সবার জন্য শিক্ষায় অ্যাক্সেসটা নিশ্চিত করতে। এক কোটি আশি লাখ শিক্ষার্থী হারিয়ে যাবে এটা হতে পারে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেজন্য বলেছেন, শিক্ষার বিনিয়োগটা বাড়াতে হবে সেই জায়গাতেই। শুধু আমরা অবকাঠামো করবো না, শুধু সুন্দর বিল্ডিং-ক্যাম্পাস করবো না, শিক্ষকদের বেতনের জায়গায় কম্প্রমাইজ করা চলবে না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে অবৈতনিকভাবে অত্যন্ত নিম্নমাধ্যমিক স্তরটা শেষ করতে পারে। অনেক অনেক এমপিও দেয়া হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেনো শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়াতে পারে সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করা আমাদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তিনি আরো বলেন, কারিগরি শিক্ষা শূন্য থেকে ১৮ শতাংশে এসেছে। কারিগরি শিক্ষার ব্যাখ্যা বা সঙ্গাও পরিবর্তন করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা শুধু হাতুড়ি বা হার্ডওয়্যারের মধ্যে রাখতে পারবো না। আমাদের কৃষি কাজ কারিগরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে, পাশাপাশি আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিও তো কারিগরি, মেডিক্যাল সেক্টরও কারিগরি। কারিগরি বলতে আমাদের যে ট্রেডিশনাল ধারণাটা ছিলো সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারিগরি শিক্ষাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
সরকার গঠনের পর শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে পুনরায় শ্রদ্ধা জানান তিনি।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।