ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভ। গতকাল দেশটির অনেক এলাকায় বিক্ষোভ পাশাপাশি সড়কে নেমে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ থেকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিক্ষোভ করার আগেই অনেককে আটক করা হয়েছে। এমনকি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদেরও স্রেফ সন্দেহের বশে আটক করা হয়েছে। এদিকে আসামে গতকাল ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার জানায়, সিএএ কার্যকর হয়েছে। যদিও এই আইন চার বছর আগে পাস করেছিল শাসক দল বিজেপি। তবে কার্যকর করতে পারেনি। আইন অনুসারে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে আইনে ভারতে যাওয়া মুসলমানরা নাগরিকত্ব পাবেন কি না, তা বলা হয়নি।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ হয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের আয়োজন করে বামপন্থী সংগঠন এআইএসএ। এ সময় ৫৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়েছে। চার বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিল সিএএবিরোধী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। সোমবার সিএএ কার্যকরের সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিজেপি চায়, পাকিস্তানের মানুষ ভারতে এসে বসতি গড়ুক। বিজেপি আমাদের ঘর, কাজ পাকিস্তানিদের দিয়ে দিতে চায়।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, আসামে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ) গতকাল রাজ্যজুড়ে ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি পালন করেছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘সত্যাগ্রহ’ পালিত হয়। পৃথকভাবে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ করেছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও মঙ্গলবার সড়কে নেমে আসেন। এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘লোকসভা ভোটের আগে এটা (সিএএ) একটা ললিপপ। মানুষের মধ্যে বর্ণবৈষম্য করা। সিএএ, এনআরসি আমরা মানব না। কারণ, আপনারা যখনই সিএএ-তে আবেদন করবেন, তখনই আপনার ভোট দিতে পারবেন না।’
সিএএ-তে কেন মুসলমান সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, আমেরিকায় কী নিয়ম আছে? পাঁচ বছর কেউ সেখানে পড়াশোনা করলে বা থাকলে তাঁরা গ্রিন কার্ড পান, সিটিজেনশিপ পান। সারা বিশ্বে একই নিয়ম। কিন্তু ভারতে কী করল ওরা? মুসলিম সমাজকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়েছে। যে রুলস বার করেছে, তাতে কোনো ক্ল্যারিটি (স্বচ্ছতা) নেই। এ সময় তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি বাংলায় সিএএ করতে দেবেন না।
তামিলনাড়ুর মন্ত্রী ও ডিএমকে নেতা দুরাই মুরুগান বিজেপিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘মুসলিমদের আর শ্রীলঙ্কার তামিলদের বাদ দিলেন কেন? এতেই পরিষ্কার যে তারা মুসলিম এবং শ্রীলঙ্কান তামিলবিরোধী।’
অবশ্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গতকাল স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে, সিএএ এবং এনআরসি এক বিষয় নয়। বিজেপির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিষয়ক শাখার প্রেসিডেন্ট এসএম আকরাম বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে যেসব সংখ্যালঘু অনেক বছর আগে ভারতে এসেছে, কিন্তু নাগরিকত্ব নেই, তাদেরই এই আইনে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এতে আমাদের দেশের কোনো সংখ্যালঘু কিংবা মুসলিমের চিন্তার কিছু নেই। এটি নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেবে না।’