বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় বিশেষ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এমন উদ্যোগের পর বিভিন্ন জেলা থেকে সহস্রাধিক আবেদন জমা হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। দুই বছর অতিবাহিত হলেও এ কার্যক্রমে গতি আসেনি। ফলে অনুমোদন হয়নি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের এসব স্কুলও। যাচাই-বাছাই শেষে অবিলম্বে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।
তথ্যমতে, জীবন দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি মূলধারার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণসহ স্বনির্ভর ও স্বাধীন জীবনযাপনের উপযোগী করতে করা হয়েছিল ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯’। নীতিমালায় বলা হয়েছিল- প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে এই বিশেষ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এসব স্কুল হবে সুবিন্যস্ত ও প্রতিবন্ধীবান্ধব। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ হবে সুগঠিত ও প্রবেশ উপযোগী। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রও হবে সুবিন্যস্ত। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী অডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, হিয়ারিং এইডের ব্যবস্থাসহ ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি ও থেরাপিসহায়ক উপকরণ এবং কাউন্সিলিং ব্যবস্থাও থাকবে স্কুলেই। এসব বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও বেতন-ভাতার জন্য কমপক্ষে ১০০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী থাকার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে থাকতে হবে কমপক্ষে ৭৫ জন। এংনডিডি সংশ্লিষ্ট (অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী) বিদ্যালয়ে বেতন-ভাতার জন্য কমপক্ষে ৭৫ জন এনডিডি শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, পশ্চাৎপদ এবং দুর্গম এলাকা ও পার্বত্য এলাকার জন্য শিক্ষার্থী সংখ্যা শিথিল করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কোনো এলাকায় পাঁচ শতাধিক প্রতিবন্ধী থাকলে সেখানেও একটি বিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হবে। শর্ত মতে, অটিজম বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হবে ১ অনুপাত ৫। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য থাকবেন একজন শিক্ষক। আর সেরিব্রাল পালসি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং ডাউন সিনড্রোম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ১০ জন, প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ১৫ জন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ১২ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য গাড়ি বা ভ্যান থাকবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ছাড়াও বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটি ও ইনক্রিমেন্ট সুবিধা পাবেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা অষ্টম গ্রেডে বেতন পাওয়ার কথা। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবকদের (বাবা-মা) এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সিনিয়র শিক্ষক বা সিনিয়র থেরাপিস্টরা নবম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষক বা সহকারী থেরাপিস্টরা দশম গ্রেডে বেতন পাবেন। এসব বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য থাকবে তিন বছর মেয়াদি ১৩ সদস্যবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি কমিটির সভাপতি থাকবেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এসব স্কুল অনুমোদন না হওয়ায় বিশেষ চাহিদার সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক অভিভাবক।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার প্রতি জেলায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেবে এমন ঘোষণার পর সারা দেশে হঠাৎই এমন অনেক স্কুল গজিয়ে ওঠে। মোট ২ হাজার ৬৯৭টি বিদ্যালয় অনুমোদন পেতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে গত বছর ১ হাজার ৫২৫টি বাছাই করে। এরপর বাদ দেওয়া হয় আরও প্রায় হাজারখানেক। অধিকতর যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদনযোগ্য প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক হাজার আবেদন থেকে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়ার সংশয় থেকে এ কার্যক্রম এগোচ্ছে না বলে জানা গেছে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও বেতন-ভাতা প্রদানকারী কমিটির সভাপতি থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা)। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা) শিবানী ভট্টাচার্য সম্প্রতি প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করার কথা। কিন্তু সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার আবেদন পাওয়া গেছে। এসব স্কুল অনুমোদন কবে দেওয়া হতে পারে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তবে নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য এই বিশেষ স্কুল অনুমোদনের কার্যক্রমে গতি হয়নি। অনুমোদনের খবর পেয়ে সারা দেশ থেকে অজস্র আবেদন আসায় বিপাকে পড়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। গত বছর কিছু প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করা হলেও পরে সে কার্যক্রমও থমকে যায়। আপাতত এসব স্কুল অনুমোদনের কোনো অগ্রগতি নেই।