রংপুরের একটি বালক ও একটি বালিকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চালু করতে যে কাজ শুরু হয়েছে তা নানা জটিলতায় শেষ হচ্ছে না। আড়াই বছর আগে শুরু হওয়া এই কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ, ফলে আগামী বছরেও এই দুটি বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না সরকার।
এদিকে, বিভাগীয় এবং পুরনো মহানগরী এলাকায় মাত্র দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকায় প্রতি বছরই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে বঞ্চিত হচ্ছে ভর্তি থেকে। এ কারণে অভিভাবকদের দূরের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের।
আবার অনেকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেও আর্তিক সংকট প্রকট হচ্ছে।
জানা গেছে, ছয় বছর আগে জাতীয় অর্থনীতি পরিষদে (একনেক) পাস হয় রংপুরের দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাজ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৯ মাস পর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে এই কাজ শুরু হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নকশা জটিলতা, সম্প্রতি জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, নিচু জমিসহ অন্যান্য সমস্যায় কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়নি।
এমনকি মূল ঠিকাদার অনেকদিন কাজ শুরু করেনি। পরে সমস্যা সমাধান করেই কাজ শুরু হয়েছে।
রংপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, ৯টি সরকারি স্কুল প্রকল্পের আওতায় রংপুর নগরীর উত্তম মৌজার হাজিপাড়া পুরনো রেডিও সেন্টারে ‘বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ আর কামালকাছনা মৌজার বোতলায় হবে ‘বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’।
বিদ্যালয় দুটি নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে। এরপর রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ হওয়া জমি শিক্ষা প্রকৌশলকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রংপুর শিক্ষা প্রকৌশল জানায়, বিদ্যালয় দুটি স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহ্বান শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এসএসএল-এসই-এমএ জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। আর উত্তম মৌজার হাজিপাড়া পুরনো রেডিও সেন্টারে ‘বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এর কাজ করছে বিল্ডার্স, কম্পিউটার লতিফ, জয়েন ভ্যান্সার নামে প্রতিষ্ঠান।
ইতোমধ্যে দুটি বিদ্যালয়ের কাজ দৃশ্যমান হলেও রংপুর নগরীর উত্তম মৌজার হাজিপাড়া পুরনো রেডিও সেন্টারে ‘বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়’এর কাজ ৩০ ভাগ আর কামালকাছনা মৌজার বোতলায় হবে ‘বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’এর কাজ ৩৫ ভাগ হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারকে ১১ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প অনুযায়ী প্রতি বিদ্যালয়ের জন্য ২৩ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ৪৩২ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রকল্পের কাজ শুরু হবার কথা ছিল ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ এপ্রিল। শেষ হবে ৩৬ মাসে। কিন্তু কার্যাদেশ হওয়ার নয় মাস পার শুরু হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে বাড়তি অর্থ গচ্চা দিতে হবে সরকারকে।
নগরীর কামাল কাচনা এলাকার বাসিন্দা কহিনুর বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়েকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য গত দুই বছর লটারিতে অংশ নিয়েছি, তবে নাম ওঠেনি। আমি চাইছিলাম যে সে রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ুক। কিন্তু এত বেশি আবেদন যে সে আশা পূর্ণ হয়নি। আমার মতো শতশত অভিভাবক চায় রংপুরে যে দুটি বিদ্যালয় হওয়ার খবর আমরা শুনেছি, তা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।