দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিলেন অধ্যক্ষ - দৈনিকশিক্ষা

দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিলেন অধ্যক্ষ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নিয়মবহির্ভূতভাবে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বাবদ এক হাজার টাকা করে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীর প্রশংসাপত্রে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। প্রশংসাপত্রে অধ্যক্ষ লিখেছেন, ‘আমার জানা মতে সে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কাজে জড়িত ছিল।’ এই ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই শিক্ষার্থী।

বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান ভূইয়ার বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থী হলো রাকিব হাসান। সে এবার বিদ্যালয় থেকে এসএসসি (ভকেশনাল) বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ট্রেডে জিপিএ ৪ দশমিক ৩২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। রাকিব উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের মো. তারা মিয়ার ছেলে।  

গত ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দুয়ার ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে রাকিব। আজ শুক্রবার বিকেলে ইউএনও কাবেরি জালাল অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত এপ্রিলে তার প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রবেশপত্র বিনা মূল্যে বিতরণ করার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবেশপত্র বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নেওয়া হচ্ছিল। এর প্রতিবাদ জানায় সে। রাকিবের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা যোগ দেন। একপর্যায়ে মানববন্ধন শুরু হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সমালোচনার মুখে টাকা নেওয়া বন্ধ হয়। এসব ঘটনায় অধ্যক্ষ রাকিবের প্রতি ক্ষিপ্ত হন। পরীক্ষার খাতায় অনেক বিষয়ে ব্যবহারিক মার্ক তাকে নামমাত্র দেওয়া হয়েছে। দু-একটি বিষয়ে ব্যবহারিক নম্বর একেবারেই দেওয়া হয়নি। 

রাকিব হাসান বলে, ‘এসএসসি পাস করার পর শেরপুর কৃষি ইনস্টিটিউটে ভর্তির সুযোগ পাই। ভর্তির জন্য মার্কশিট ও প্রশংসাপত্রের প্রয়োজন হয়। গত সেপ্টেম্বরে এসব আনার জন্য গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে যাই। অফিস সহকারী আমাকে দুই দিন ঘোরানোর পর মার্কশিট দিয়ে বলে, অধ্যক্ষ প্রশংসাপত্র দিতে নিষেধ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কয়েকজন জানালেন অধ্যক্ষের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পা ধরে ক্ষমা চাইলে প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। কারণ, প্রবেশপত্র বিতরণের সময় প্রতিবাদের কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন। সে কারণে ক্ষমা চাইলে প্রশংসাপত্র মিলতে পারে।’ 

১ অক্টোবর শেরপুর কৃষি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ছিল বলে জানায় শিক্ষার্থী রাকিব হাসান। সে বলে, ‘প্রশংসাপত্র না পেলে ভর্তি অনিশ্চিত। তাই বাধ্য হয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগ দেওয়ার পর আমাকে প্রশংসা দেওয়া হলো। কিন্তু প্রশংসাপত্রে অধ্যক্ষ লিখে দেন, ‘আমার জানা মতে সে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কাজে জড়িত ছিল।’ প্রশংসাপত্র হাতে পাওয়ার পর মনে করছিলাম হয়তো প্রিন্টে ভুল হয়েছে। অধ্যক্ষ স্যারের কাছে গিয়ে বললাম স্যার প্রিন্টিংয়ে ভুল হয়েছে। জবাবে তিনি বললেন, ‘“ভুল হয়নি, যা দিয়েছি সেটাই ঠিক আছে।” এই ঘটনায় ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবার অভিযোগ দিয়েছি।’

রাকিব প্রশ্ন রেখে বলে, ‘অনিয়মের প্রতিবাদ করা তো কোনো অন্যায় নয়। শিক্ষক বাবার মতো তিনি কীভাবে সন্তান সমান শিক্ষার্থীকে প্রতিপক্ষ মনে করে এমন প্রতিশোধ নিলেন?’ 

এ বিষয়ে গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘প্রত্যয়ন যেমন ভালো দেওয়ার সুযোগ আছে, তেমনি খারাপ দেওয়ারও সুযোগ আছে।’ দুর্নীতির প্রতিবাদের কারণে এমন করা হয়েছে কি না জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পায়ে একটু ব্যথা, পরে কথা বলব।’ এরপর তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

কেন্দুয়া উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান ভূইয়াকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাই তো অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করবে, এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শিখে বড় হলে দেশ একদিন দুর্নীতি মুক্ত হবে। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে অনিয়মের প্রতিবাদ করার জন্য প্রশংসাপত্রে এমনটা লিখে থাকলে—এটা খুবই দুঃখজনক ও বিব্রতকর।’ 

এ বিষয়ে কেন্দুয়ার ইউএনও কাবেরি জালাল বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযোগ দিয়েছে ওই শিক্ষার্থী। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003180980682373