দুস্থ ও এতিমদের জন্য সৌদি সরকারের দেয়া কোরবানির পশুর মাংসে ভাগ বসানোর অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিক ও রাজনৈতিকবিদদের বিরুদ্ধে। বুধবার কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উপজেলা শহরে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্র জানায়, জেলার ৯ উপজেলার জন্য সৌদি সরকারের দেয়া ১৭৭ কার্টুন কোরবানির পশুর মাংস মাংস বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চিলমারী উপজেলায় ১২ কার্টুন মাংস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব মাংস জেলার বিভিন্ন এতিম খানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ দুস্থদের মাঝে বিতরণ করার জন্য বলা হয়েছে।
চিলমারী উপজেলার একাধিক সাংবাদিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কয়েক বছর পর সৌদি সরকারের দেয়া কোরবানির মাংস চিলমারীতে পৌঁছালেও তা হতদরিদ্র্য ও বঞ্চিতদের মাঝে বিতরণ না করে সেসবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা ভাগ বসিয়েছেন। বরাদ্দের ১২ কার্টুন মাংসের মধ্যে ৬ কার্টুন মাংস ছয় ইউনিয়ন পরিষদে দেয়া হয়েছে। বাকি ছয় কার্টুন মাংস জনপ্রতিনিধি, উপজেলার তিন প্রেসক্লাবের সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এসব মাংস বরাদ্দের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহীন দুস্থ, হতদরিদ্র্য মানুষসহ সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে মাংস বিতরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপজেলা পরিষদের স্টাফ, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও মাংস বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের এলাকার দুস্থদের মাঝে বিতরণের উদ্দেশে মাংসের কার্টুন দেয়া হয়েছে।
জেলা অন্য উপজেলাগুলোতে এতিম ও দুস্থদের মাঝে মাংস বিতরণ করা হলেও চিলমারীতে সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জন্য কেনো- এমন প্রশ্নে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এখানে (চিলমারীতে) দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা চলে আসছে। তাই আমি নতুন করে কিছু বলিনি।
নিজে সদস্য হলেও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব মাংস নেননি জানিয়ে চিলমারী প্রেসক্লাবের সদস্য মমিনুল ইসলাম বাবু। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এই মাংসের সম্পূর্ণ অধিকার দুস্থ, অভাবগ্রস্থ ও এতিমদের। এই উদ্দেশেই এসব মাংস বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও সাংবাদিক ও রাজনৈতিক দলের ভাগ বসানো লজ্জাজনক। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই মাংস সাংবাদিকরা না নিলেও পারতেন।
প্রেসক্লাব চিলমারীর সভাপতি মনিরুল আলম লিটু মাংস পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের ক্লাবে মাংস পেয়েছি। এগুলো নেয়া ঠিক নয়। তবে আমাদেরকে ডেকে দিয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে কোনো কিছু অবগত নন বলে জানিয়েছেন চিলমারী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি রাজনৈতিক কাজে ঢাকায় ছিলাম। এ বিষয়ে কিছু জানি না।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের দিয়ে দুস্থ ও এতিমদের দেয়া হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা সাংবাদিকদেরকে দেয়া হয়নি। মাংস সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে।