বর্তমানে দেশে ৫০ পেরোনো ৭ লাখের কিছু বেশি নারী-পুরুষ অবিবাহিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। তবে তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে বিয়ের প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (এসভিআরএস) প্রতিবেদন ২০২২’-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে দেশে বিবাহিত মানুষের হার বেড়েছে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বৈবাহিক অবস্থার চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ৪৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নারী বর্তমানে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ আছেন। আর বিয়ের বাইরে রয়েছেন মোট জনসংখ্যার ৭ কোটি ২০ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং নারী ৩৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সর্বশেষ আদমশুমারি এবং এসভিআরএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ জন পুরুষ। এর মধ্যে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৮ জন বিয়ে করেনি। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক পুরুষ এখনো বিয়ে করেনি। বিপরীতে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন নারীর মধ্যে বিয়ে করেনি ৩ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ১২৬ জন।
বয়সভিত্তিক অবিবাহিতদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী-পুরুষ রয়েছেন ২ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৮ হাজার ৩১২ জন পুরুষের মধ্যে ৫ লাখ ২২ হাজার ১৩৩ জন অবিবাহিত রয়েছেন। বিপরীতে পঞ্চাশোর্ধ্ব ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার নারীর মধ্যে কখনো বিয়ে করেননি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৮ জন। এই হার পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীর প্রায় দেড় শতাংশ।
সাধারণত বাংলাদেশে ৫০ বছরের বেশি বয়সে বিয়ে করার হার খুবই কম। সেই হিসাবে ৫০ বছর বয়স পার হলেও যারা বিয়ে করেন না, কিছু ব্যতিক্রম বাদে তাদের বেশিরভাগই সারা জীবন অবিবাহিত থাকেন। তাদের চিরকুমার বা চিরকুমারী বলা হয়। এই হিসাবে দেশে বর্তমানে চিরকুমার ও চিরকুমারীর সংখ্যা ৭ লাখ ১১ হাজার ৮৩১ জন।
৫০ বছরেরও বেশি বয়স হলেও বিয়ে না করার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ অবিবাহিতের মতে, ভালো ক্যারিয়ার গড়তে বেশি সময় চলে যায়। এ ছাড়া পারিবারিক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকের বয়স বেশি হয়ে যায়। অনেকে আবার পছন্দের মানুষকে সঙ্গী হিসেবে না পাওয়ায় বিয়ে করেন না।
অন্যদিকে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছেন ৯৭ লাখ। তাদের মধ্যে ৪৩ হাজার জন কখনো বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হননি। এর মধ্যে ৩১ হাজার ২৪৬ জন পুরুষের বিপরীতে নারী রয়েছেন ১২ হাজার ১৪৮ জন। অর্থাৎ ৬৫ ঊর্ধ্ব বয়সী নারীর চেয়ে প্রায় ১৯ হাজার বেশি পুরুষ অবিবাহিত রয়েছেন।
বয়সভিত্তিক অবিবাহিতদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী অবিবাহিত পুরুষ রয়েছেন ২৫ হাজার ১৩ জন। বিপরীতে নারী ৮ হাজার ৭৯৯ জন। ৫৫-৫৯ বছর বয়সী ২৬ হাজার ৮৯৩ জন পুরুষের বিপরীতে নারী ৮ হাজার ৮৮৩ জন। আর ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ৪২ হাজার ৪১৬ পুরুষের বিপরীতে নারী ১৭ হাজার ৪০৫ জন।
৫০ বছরের নিচে অবিবাহিতদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৪৭ হাজার ৪৯১ জন পুরুষের বিপরীতে অবিবাহিত নারী ২৫ হাজার ২২৪ জন। ৪০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী ৭৯ হাজার ৩৭৫ জন পুরুষের বিপরীতে নারী ৩৪ হাজার ৪৩৫ জন। ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫১ জন পুরুষের বিপরীতে নারী ৬৬ হাজার ১১৩ জন।
বিয়ের উপযুক্ত পুরুষের তুলনায় অবিবাহিত নারীর সংখ্যা অনেক কম। সাধরাণত বিয়ের উত্তম সময় ধরা হয় ২৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। দেশে এই বয়সী অবিবাহিত পুরুষ রয়েছেন ২৫ লাখ ১ হাজার ৬৬২ জন। বিপরীতে অবিবাহিত নারী রয়েছেন মাত্র ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৫ জন। অর্থাৎ এই বয়সে বিয়ের উত্তম সময় ধরা হলেও নারীর তুলনায় ১৮ লাখের বেশি রয়েছেন অবিবাহিত পুরুষ।