দোয়েল পাখিদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ খতিয়ে দেখেন গবেষকরা। যার মধ্যে রয়েছে, এরা কীভাবে সান্নিধ্য, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, আগ্রাসন ও কণ্ঠের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
মারমুখো বা আক্রমণাত্মক ম্যাগপাই বা দোয়েল পাখি কম বুদ্ধিমান হয় বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
‘দ্য ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (ইউডব্লিউএ)’-এর গবেষকরা উদ্ঘাটন করেছেন, যেসব দোয়েল নিজেদের দলের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি মারমুখো বা আক্রমণাত্মক করে থাকে সে সব দোয়েল কম বুদ্ধিমান হয়।
‘ইউডব্লিউএ-এর স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস’-এর ড. লিজি স্পিচলির নেতৃত্বে এ গবেষণাটি বিজ্ঞান ও গবেষণাধর্মী জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
দোয়েলরা সাধারণত সামাজিকভাবে দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। এ গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মেলে, নিজেদের দলের সদস্যদের কাছে খারাপ হওয়া একেবারেই সুবিধাজনক নয়।
এ গবেষণায় বন্য ‘ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান ম্যাগপাইস’ ও ‘জিমনোরহিনা টিবিসেন ডরসালিস’ প্রজাতির দোয়েল পাখিদের উপর নজর দেন গবেষকরা। পাশাপাশি এদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও দলের আকার কীভাবে এদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করে সেটিও পরীক্ষার আওতায় ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
দোয়েল পাখিদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ খতিয়ে দেখেন গবেষকরা। যার মধ্যে রয়েছে, এরা কীভাবে সান্নিধ্য, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, আগ্রাসন ও কণ্ঠের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
গবেষকরা দোয়েল পাখিদের ১৮টি দল নিয়ে এ গবেষণাটি করেছেন। প্রতিটি দলে ৮০ থেকে ১২০টি দোয়েল ছিল।
দোয়েল পাখিদের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য গবেষকরা রং-কোডেড ঢাকনাসহ একটি কাঠের গ্রিড ব্যবহার করেন।
আর ঢাকনাগুলোকে কাঠের গ্রিডের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করা হয় যাতে একটি অংশ ঘুরে গেলেও অন্যটি ঘোরে না। ফলে পাখিদের ঠোকরানোর ফলে ঢাকনাগুলো দুলতে থাকে এবং এ সময় যদি দোয়েল পাখি সঠিক ঢাকনাটি ঠোকরায় তবে একে পুরস্কার হিসেবে খাবার দেওয়া হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাখিদের নিজেদের পরিবেশ থেকে তথ্য শেখার ও মনে রাখার ক্ষমতা মেপেছেন গবেষকরা।
“আমরা দেখেছি অনেক বড় দলে থাকা দোয়েল বিভিন্ন বিষয় শেখার কাজে আরও ভাল পারফর্ম করেছে। সামাজিক নেটওয়ার্কে একটি দোয়েল পাখির অবস্থান এদের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যেসব দোয়েল পাখিদের আগ্রাসী মনোভাব কম ছিল এদের তুলনায় অন্য যেসব দোয়েল আক্রমণাত্মক মনোভাবের ছিল এদের নিজেদের দলের মধ্যে খারাপ হওয়ার প্রবণতা বেশি।”
এ গবেষণাটি ‘প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের চাবিকাঠি’ এমন অনুমানকে সমর্থন করে। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, যেসব ব্যক্তিরা আগ্রাসনের মাধ্যমে সম্পদ একচেটিয়া করতে পারে না তারা নতুন সমস্যা সমাধানে আরও বেশি সময় ব্যয় করবে।
অন্যভাবে বললে, যদি একটি দোয়েল যা চায় তা না পেয়ে মারমুখো হয়ে ওঠে তবে একে সফল হওয়ার অন্যান্য আরও উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যা দোয়েলকে আরও স্মার্ট করে তুলতে পারে।
“সামাজিক জটিলতা মাপার বেলায় অনেক সময়ই দলের আকারকে বিবেচনা করা হয়। তবে, সবসময় এটি দলের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়ার নানা ধরনকে তুলে ধরতে পারে না। আমাদের গবেষণায় দেখা মেলে, দোয়েল যেভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা এদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,” বলেছেন ড. স্পিচলি।
এ গবেষণায় উঠে আসে, কোনো দলে থেকে আক্রমণাত্মক হওয়া দোয়েল পাখিদের জন্য সুবিধাজনক নয়। এর পরিবর্তে, যেসব দোয়েল সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণের মুখোমুখি হয় এদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
কীভাবে সামাজিক সম্পর্ক প্রাণীদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার বিবর্তন ঘটাতে পারে সে সম্পর্কেও নতুন ধারণা দেয় এ গবেষণা।