ধার ও ভারে পিএসসিকে দুর্গন্ধ মুক্ত করতে - দৈনিকশিক্ষা

ধার ও ভারে পিএসসিকে দুর্গন্ধ মুক্ত করতে

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

সরকার অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে  আমার অনুজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেও অনুজ। এসব কারণে বয়সেও তো অবশ্যই অনুজই। সংস্থা পরিচালনার অভিজ্ঞতায়ও আমার ভান্ডারটা সম্ভবত একটু  ভারী। আমি  চারটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছি। মাঠ প্রশাসন ও সচিবালয়ের অভিজ্ঞতা বাদই দিলাম।  

বামে ড. মোবাশ্বের মোনেম ও ডানে একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার

তবে আমাদের মিল অন্য জায়গায়। আমার দুজনই বাংলাদেশের  নাগরিক।  বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা। তিনি এবং আমি দু'জনই শিক্ষক। তবে তিনি ফুলটাইম শিক্ষক, আর আমি পারটাইম শিক্ষক। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পড়াই। অবসর গ্রহণের পর মাঝেমাঝে পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও যাওয়া হয়।

গবেষণার ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু মিল আছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণা তাঁর মূল কাজের মধ্যে পড়ে। এটা আমার মূল কাজের মধ্যে পড়ে না। তা সত্বেও  আমাকে কিছু গবেষণার কাজ করতে হয়। তাই গায়ে পড়ে তাঁকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই-

১. পিএসসি আমলাতন্ত্রের পবিত্রতম জায়গা।এটাকে আমলাতন্ত্রের মসজিদ, মন্দির - প্যাগোডার সঙ্গে তুলনা করা যায়। এখানে ক্যাডার/নন- ক্যাডার অফিসার/প্রশাসনিক লিডার বাছাই/মনোনীত করা হয়। বাছাই/মনোনয়ন করার ক্ষমতা এক পবিত্র কাজ। এ কাজে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। এ দায়িত্বকে ইমামতি বলা যায়। ইমাম সকল মুসল্লির ইমামতি করেন। তিনি নিজ জেলা অথবা আত্মীয়ের জন্য আলাদা নিয়ত পড়েন না।

পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকেও অভিন্ন মানের নিরপেক্ষতা ও সততার নীতিঅনুসরণ করতে হবে। সব প্রার্থী তাঁর কাছে সমান। তিনি সবার মধ্য থেকে সেরাটাকে নেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করবেন। এমনটা না করতে পারলে তিনি ইমাম হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন। এটা তাঁকে মাথায় রাখতে  হবে। 

ভারত বিভক্তির পর ভারত ও পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পবিত্রতা নিয়ে  কঠোর অবস্থানে ছিলো। দুদেশের বরেণ্য নেতারা নিরপেক্ষ পাবলিক সার্ভিস কমিশন  গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন। সে কারণে এখনো দু'দেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনই বিশ্বের অন্যতম সেরা কমিশন হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আমরা একটি চৌকস পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করতে পারিনি। আমাদের সে দূরদৃষ্টি ও সার্বজনীন মনোভাব ছিলো না।
আমরা দলকানা নীতি গ্রহণ করি এবং এমন একজন ব্যক্তিকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করি, যাঁর এ বিষয়ে কোন অ্যাকাডেমিক লেখাপড়া ও অভিজ্ঞতা কোনটাই ছিলো  না।  তিনি হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ো মাপের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হবার জন্য সঠিক ব্যক্তি ছিলেন  না। ওই সময়ের পাবলিক সার্ভিস কমিশন নিয়ে ইতিহাসের বইয়ে ও বাজারের আলোচনায় নানা রকম মুখরোচক আলোচনা রয়েছে। 
অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমের অ্যাকাডেমিক বিদ্যা পিএসসির কাজের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। এখন তাঁকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি  ‘অপারেশন  কমাণ্ডার’ হিসেবেও কারো থেকে কম নন। আমি আজ তাঁকে অভিনন্দন  জানাবো না। সে দিনের অপেক্ষায়  থাকবো, যেদিন  আমার সিভিল সার্ভিস বিষয়ক বইতে তাঁকে মূল্যায়ণ করবো। সেখানে তিনি কিভাবে মূল্যায়িত হবেন, সেটা তাঁর পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে। আমি পুরোপুরি নিরপেক্ষতার সাথেই তাঁর  অবদান ও অর্জনকে বিচার-বিশ্লেষণ করবো।

পিএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি একজন প্রশাসক, পরিচালক  ও ম্যানেজার। এমন মানুষদের সম্পর্কে  প্লেটোর  একটি  উক্তি  হলো, ‘এঁদের  মধ্যে  তিনি হলেন নিকৃষ্টতর যিনি জনপ্রিয়তার মোহগ্রস্ত থাকেন।’ 

আসলেই অফিস প্রধান যদি ভালো মানুষ সেজে থাকাকে অগ্রাধিকার দেন, তিনি  ভালো চালাতে পারবেন না।  তিনি  ব্যর্থ হবেন। এরকম  হলে দুষ্ট লোকেরা সুযোগ  নেবে। তিনি অবশ্যই ভদ্র ও বিনয়ী হবেন, পাশাপাশি দৃঢ়চিত্ত ও প্রয়োজনে কঠোর  হবেন।

২. বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানের মতো পিএসসিরও অনেক দুর্গন্ধ আছে। প্রথমে পিএসসিকে দুর্গন্ধ মুক্ত করতে হবে। এজন্য চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সততা, সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক সততা নিশ্চিত করার কঠোর ব্রতকে দৃশ্যমান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে  সফল হতে হলে ধার ও ভার দুটোকেই কাজে লাগাতে হবে।

৩.  দু'জন পরীক্ষক দিয়ে খাতা দেখার নিয়মটি বাতিল করা দরকার। সকল সার্ভিস  থেকে সৎ, সুনামধারী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করুন। তাঁদের মধ্য থেকে প্রশ্নকারক, মডারেটর, খাতা নিরীক্ষক ও মৌখিক পরীক্ষক  নিযুক্ত হবেন। এক্ষেত্রে  স্বজনপ্রীতি/ প্রিয়তোষণকে জবাই দিতে হবে। প্রিয়তোষণ ও ন্যায়-নীতি বোধ পরস্পরের শত্রু।

৪. পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে ফলাফল চূড়ান্ত করা এক বছরের মধ্যে শেষ করা হয়। ধরে ধরে কাজ করলে বাংলাদেশেও এটা সম্ভব।

৫.  চেয়ারম্যান মহোদয়, আপনার নিয়োগটি আপনার জন্য  privilege   নয়,  obligation. আপনি সম্মানিত হবার পাশাপাশি বিপদেও পড়েছেন। আপনি  পরিবর্তন আনতে পারলে সম্মান টেকসই হবে, না পারলে নিন্দার ঝড় উঠবে।

৬. আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আপনাকে কোনো বই পড়তে বলা ঔদ্ধত্য।  তথাপি বিনীতভাবে বলছি, আমার লেখা বই, ‘মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস’ ও ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস’ পড়ে দেখতে পারেন। কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য পেলেও পেতে পারেন। 

এখন আমরা প্রায় বাই hypocrite. আমাদের কথা ও কাজে মিল নেই। এ কারণে আমরা গ্রহণযোগ্যতা হারাই, উপহাসের পাত্রে পরিণত হই। আমাদের কথা ও কাজে মিল থাকা খুবই জরুরি। নিজে আচারি অন্যকে শেখাই, নীতিটাই সেরা।

পিএসসির সদস্যদের প্রতিও একই আবেদন। 

কোনো বেয়াদবি হলে ক্ষমাপ্রার্থী। 

লেখক: সাবেক সচিব,  লেখক, গবেষক ও সুশাসনের কর্মী

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036060810089111