নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শঙ্কা যেনো কাটছে না - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শঙ্কা যেনো কাটছে না

মো. ইউসুফ আলী |

মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান এমন একটি ব্যবস্থা যা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর প্রণালীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি ক্ষুদ্র প্রণালী। প্রবল শক্তিশালী সামাজিক আচার, চিরাচরিত রীতিনীতির সঙ্গে শিক্ষাদান ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে দ্বিতীয় বছর চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সংশয়, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দূর হচ্ছে না। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বেশ কিছু সংশোধন, পরিমার্জন করা হয় এবং প্রয়োজনে আরো সংষ্কার, পরিমার্জন করা হবে বলে উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে।

কিন্তু শিক্ষা কমিটি ও শিক্ষা কারিগর কমিটির অব্যবস্থাপনা ও অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নতুন নতুন বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ‘নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন হবে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক’। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শিখাইবে না, শিখনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে দ্বিতীয় বছরেও শিখন পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় শিখন কার্যক্রম অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে চলছে। এতে অভিভাবকদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আরো বাড়ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ এর বেশি হলে নির্দেশনা মোতাবেক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা আদৌও সম্ভব কি না? শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০ এর বেশি হবে না মর্মে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। 

বাস্তবে অধিকাংশ স্কুলে এ সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। শ্রেণিতে ৬০ জনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাখার জন্য আবেদন করলেও তা মঞ্জুর হতে বছরের পর বছর চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে নতুন শিক্ষাক্রম বিপর্যয় ডেকে আনার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা পরিমার্জন করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ করা হয়েছে। কমিটি জন আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করবে বলে প্রত্যাশা। মূল্যায়নের সূচক ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজে শিক্ষার লাভা লাভ খতিয়ে দেখতে পারে? চলতি বছরের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হতে চলছে এখনো পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেলো। নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে পাবলিক পরীক্ষা দেবেন কিন্তু এখনো তারা সিলেবাস, পরীক্ষা  ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন। নবম ও দশম শ্রেণির জন্য পৃথক পাঠ্য বই। নবম শ্রেণির পাঠ্য বই পাবলিক পরীক্ষার সিলেবাসে থাকবে না জেনে নবম শ্রেণির ক্লাস ও বই পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। শোনা যাচ্ছে নবম শ্রেণির শেষে পাবলিক পরীক্ষার আদলে পরীক্ষা নেয়া হবে। সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরন, নম্বর, সময়, মূল্যায়ন, পাস ফেল কেমন হবে তার কোনো গাইডলাইন এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের দেয়া হয়নি। বিশেষ করে নবম শ্রেণির অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা সন্তানের শিক্ষা নিয়ে বেশি শঙ্কিত। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষকদের ট্রেনিং সমাপ্ত হয়েছে। ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষক এমনকি মাস্টান ট্রেইনারদেরও মূল্যায়নের স্বচ্ছ ধারণা নেই। শিক্ষা কারিকুলাম আমূল পরিবর্তন করা হলো অথচ শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হলো না। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরুর আগেই শিক্ষকদের প্রস্তুত করা জরুরি থাকলেও তা করা হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিযোগিতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জিং বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। অসম প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে সৃজনশীল ও ভারসাম্য প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারলে চ্যালঞ্জিং বিশ্বে টিকে থাকতে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। 

এনসিটিবির নির্দেশনায় একজন শিক্ষক একাধিক বিষয়ে ট্রেনিং নিতে পারবেন না এবং ট্রেনিং ব্যতিত কোনো শিক্ষক পাঠদান করাতে পারবে না। পদ শূন্য হলে অথবা শিক্ষক ছুটিতে থাকলে ওই বিষয়ের ক্লাসের কী হবে তার সুরাহা না করে নির্দেশনা জারির কারণে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের যে বিষয় গুলো পরিমার্জন করলে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন, অভিভাবকদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা দুরীকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। শাখা অনুমোদন ও তার বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। 

পদ শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা। এক্ষেত্রে আগামী বছর অবসরজনিত সম্ভাব্য শূন্যপদ এবং অন্যন্যা কারণে শূন্যপদের সংখ্যা নিরূপণ করে তার বিপরীতে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফলের কাজ সম্পন্ন করে নিয়োগের জন্য শিক্ষক প্রস্তুত রাখা। যখন যেখানে পদ শূন্য হবে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। অর্থাৎ নিয়োগ পরীক্ষা হবে বছরে একবার কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে সারা বছরব্যাপী। ৩০-৪০ নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৬০-৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং সিজিপিএ ফলাফল দেয়া। 

শিক্ষককে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা মুক্ত করে শুধুমাত্র শিক্ষা ও শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক মনোনিবেশ করার পরিবেশ তৈরির পদক্ষেপ নেয়া। মেধাবীদের চাকরির প্রথম চয়েস যেনো শিক্ষা হয়। সেজন্য শিক্ষকের বেতন স্কেল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্কেল করা। সরকারি, বেসরকারি (এমপিওভুক্ত), প্রাইভেট সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমযোগ্যতা সম্পন্নদের সমান বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া। 

সর্বোপরি জন আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমকে জনবান্ধব শিক্ষাক্রমে পরিণত করে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ জনগণের প্রত্যাশা।
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট

 

আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল - dainik shiksha এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর - dainik shiksha এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ - dainik shiksha হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি - dainik shiksha ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068759918212891