নদী ভালো নেই - দৈনিকশিক্ষা

নদী ভালো নেই

ফয়সাল আহমেদ |

আজ বিশ্ব নদী দিবস। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রোববার দিবসটি উদযাপন করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও নদী সুরক্ষার দাবিতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। যেমনটি আজও হচ্ছে। নদী দিবসের আগে-পরে মিলে আলোচনা-মানববন্ধনসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশেই দিবসটি পালিত হয়। নদী ও পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো বেশ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপন করে। এতে নতুন করে নদী সুরক্ষার জোরালো দাবি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। 

নদীকর্মীরা যখন নদী বাঁচানোর দাবিতে সোচ্চার, ঠিক তখন সারা দেশের নদীচিত্রটি আসলে কী তা জানার জন্য চোখ বুলিয়ে ছিলাম সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলোর দিকে।

গত ১৫ জুলাই ‘দখল-দূষণে অস্তিত্বসংকটে ঝিনাই নদ’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পত্রিকাটির জামালপুর প্রতিনিধির করা রিপোর্টে জানা যায়- জামালপুরের ঝিনাই নদের কোথাও ভরাট করা হয়েছে, কোথাও নদের পাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও আবার নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে নদে ময়লা-আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দখল ও দূষণে নদটি এখন অস্তিত্বসংকটে। 

নদে পানি আটকে অনেকেই মাছ ধরছেন। জামালপুর-মেলান্দহ মহাসড়কের ঝিনাই সেতুর দুই পাশ দখল হয়ে গেছে। সেতুর উত্তর পাশে বালু তুলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কম্পপুর মোড়ে নদের উত্তর পাড় কিছু মানুষ ভরাট করে জায়গা বাড়িয়ে দোকান নির্মাণ করেছেন। এর একটু সামনেই নদে বর্জ্যের স্তূপ। বাসাবাড়ির আবর্জনা নদে ভাসছে। সেখানে দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। চন্দ্রা এলাকায় নদের পাড় কেটে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। নদের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বহু কাঁচা, আধা পাকা ও পাকা স্থাপনা। যত দূর চোখ যায় কালো পানি।

গত ১ আগস্ট দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ঈশ্বরদীর পাঁচ নদী শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইত্তেফাক। পত্রিকাটির ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতার প্রতিবেদন বলছে- মৃতপ্রায় ঈশ্বরদীর পাঁচটি নদীর বেশিরভাগ জায়গা বেদখল হয়েছে। তীরবর্তী জমির মালিকরা নিজেদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে দখল করেছে এসব নদী। সংকুচিত হতে হতে এসব নদী এখন হারিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীর মতো ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে বহমান কমলা নদী ও সুতা গাঙ এক সময়ে প্রাণবন্ত ছিল। পানিতে টইটুম্বুর ছিলো চিকনাই, রতনাই ও চন্দ্রাবতী নদী। দখল ও দূষণে এগুলোর সবই এখন মৃতপ্রায়। বর্ষাকালে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক জুড়ে চলে চাষাবাদ।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টার অনলাইন হরিহর নদী নিয়ে ছোট্ট একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ‘এ নদী কেমন নদী’। মাছ চাষের জন্য হরিহর নদী দখল করে নিয়েছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর বেশিরভাগ অংশে তারা পুকুর কেটে তার চারপাশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। ঝিকরগাছা, মনিরামপুর ও যশোর সদর উপজেলায় দখল হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর ‘দখলে নালায় পরিণত কাজলা নদী, নাব্য সংকটে গোচারণ ভূমি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিদিনের সংবাদ। পত্রিকাটির মেহেরপুর প্রতিনিধির করা রিপোর্ট বলছে- মেহেরপুরের গাংনীতে প্রভাবশালীদের দখলের কবলে পড়ে এক সময়ের খরস্রোতা কাজলা নদী নালায় পরিণত হচ্ছে। দীর্ঘদিন খনন না করায় নদীতে পলি পড়ে নাব্য কমেছে। তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভরা মৌসুমেও অধিকাংশ স্থানে পানি নেই। মরা কাজলা এখন গবাদিপশুর চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। গাংনী উপজেলার বড় নদী মাথাভাঙ্গা। এই নদীর কাজিপুর ইউনিয়নের অংশে উৎপত্তি হওয়া কাজলার বিস্তৃতি ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে। উৎপত্তিস্থল থেকে কাজলা নদী হিন্দা মাঠ, নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব ও সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রাম হয়ে ভৈরব নদে মিশেছে। কাজলা নদী গঙ্গার শাখা নদী ভারতের জলঙ্গীর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে একসময় বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে থাকত কাজলা। বছর জুড়ে কোটি টাকার মাছ পাওয়া যেতো। তবে ভাটপাড়া অংশের দুই কিলোমিটার এলাকা ছাড়া পুরো নদী এখন মৃতপ্রায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের কাজলা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দক্ষিণ অংশে চর জেগে উঠেছে। সেখানে এখন গবাদিপশু চড়ে বেড়ায়। তবে উত্তর অংশে ২০০ গজের মতো এলাকায় হাঁটু পানি।

জামালপুরের ঝিনাই নদ, ঈশ্বরদীর কমলা নদী, সুতা গাঙ, চিকনাই, রতনাই, চন্দ্রাবতী, যশোরের মনিরামপুর হরিহর নদী, কিংবা মেহেরপুরের গাংনীর কাজলা নদী, কোনো নদীই আসলে ভাল নেই। দখল-দূষণে ক্রমাগত বিলিন হচ্ছে আমাদের নদী। কিন্তু কেনো? আসল সমস্যাটা কোথায়- সেটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। 

নদী-পরিবেশ কর্মীরা প্রতিনিয়ত নদী সুরক্ষার কথা বলছেন, সরকারও বলছে আমরা নদী দখলের বিরুদ্ধে। তারপরও অবিরাম নদী দখল হচ্ছে। থেমে নেই। আমরা চাই চূড়ান্তভাবে এসবের অবসান হোক। শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেখতে চাই। 

আজ থেকেই আর এক ইঞ্চি নদীও যেনো কেউ দখল করতে না পারে, নদীকে দূষিত করতে না পারে, কিংবা কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তে নদীর মৃত্যু না ঘটে সে বিষয়ে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও নদী কমিশনকে অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে চাই। 

বাংলার ভূপ্রকৃতিগত যে ভৌগোলিক অস্তিত্ব, তা প্রধানত নদ-নদীর অবদান। নদী আমাদের আপনজন। চোখের সামনে আপনজনদের এমন অবস্থা কোনোভাবেই দেখতে চাই না। নদী ফিরে পাক তার চিরচেনা পরিপূর্ণ রূপ। দখল ও দূষণমুক্ত হোক দেশের প্রতিটি নদী। আজকে নদী দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : ফয়সাল আহমেদ, লেখক ও গবেষক 

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026748180389404