নওগাঁর মান্দার চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে তার নিজ বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে ‘চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়’ নামের একটি ননএমপিও স্কুলের নামে পরীক্ষা দেয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ওই প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ননএমপিও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কোটা পূরণ করতে এই অনিয়ম করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে দেশের শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তায় ‘ননএমপিও স্কুলের নামে পরীক্ষা দেওয়াচ্ছেন প্রধান শিক্ষক’ শিরোনামে গত ১৭ মে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে আসে নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসারের। এ সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, এলাকায় চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম থাকায় এ স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি হয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ওই বিদ্যালয়ের ১১৭ জন পরীক্ষার্থী। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত (ননএমপিও) চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করান। তিনি বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে জানান অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ১১৭ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন ১০৪ জন। বাকি ১৩ জন শিক্ষার্থীদেরকে না জানিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের নামে ফরম করিয়ে পরীক্ষা দেয়াচ্ছেন। সেই ১৩ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ জন বিজ্ঞান বিভাগের আর ৮ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন পরীক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই বিদ্যালয়ে আমরা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিতভাবে লেখাপড়া করেছি। এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ১১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলাম। ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমাদের ১৩ জন শিক্ষার্থীদের কাউকে উপবৃত্তির টাকাও দেয়া হয়নি। চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমাদের ১৩ জন ছাত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সেসব বিষয়ে আমরা কেউ জানতাম না। পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে গিয়ে আমরা জানতে পারি চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ১১২ নং রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। আর বাকি ১০৪ জন এই স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে মান্দার প্রসাদপুরে মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিস আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তারা জেএসসি পরীক্ষাও ওই প্রতিষ্ঠান থেকে দিয়েছে। ওই পরীক্ষার্থীরা কোন স্কুলে ভর্তি হয়েছে এবং ক্লাস করেছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে দেখা করতে বলেন প্রধান শিক্ষক।
চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে করে চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শহরের প্রতিষ্ঠানে অনেকে লেখাপড়া করে গ্রামের প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাতে সমস্যা কি?
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা শিক্ষা অফিসার। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখকে সরেজমিনে ওই দুই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্তের চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারের পাঠানো চিঠি সোমবার পেয়েছি। মঙ্গলবার ওই দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তদন্তের জন্য চিঠি পাঠানো হবে। সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দৈনিক আমাদের বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখার পর আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একজন অভিভাবক সোমবার তার মেয়েকে ফরম পূরণ করেও প্রবেশপত্র না দেয়ায় বিষয়ে আমার দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সত্যতা পেলে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।