সব সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ছয় পিরিয়ড করে ক্লাস হবে। আর নবম ও দশম শ্রেণিতে ক্লাস হবে সাত পিরিয়ড। নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন ক্লাস রুটিনের সঙ্গে সমন্বয় করে এভাবে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস নিতে স্কুলগুলোর জন্য রুটিন প্রস্তুত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এদিকে এনসিটিবির করা ওই রুটিন অনুযায়ী স্কুলগুলোকে ক্লাস চালাতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
নতুন রুটিন অনুসারে, এক শিফটের স্কুলগুলোর ক্লাস সকাল দশটায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। দুই শিফটের স্কুলগুলোর প্রভাতী শিফটের ক্লাস সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে। আর দিবা শাখার ক্লাস চলবে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত। ক্লাস শুরুর আগে হবে সমাবেশ।
চলতি বছর মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঠদান শুরুর আগেই নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে সাত পিরিয়ড ক্লাস নির্ধারণ করে এ দুই শ্রেণির রুটিন তৈরি করে দিয়েছিলো এনসিটিবি। কিন্তু পরে গত এপ্রিল মাসের শেষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছয় পিরিয়ড ক্লাস নির্ধারণ করে রুটিন সংশোধন করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে ষষ্ঠ ও সপ্তমে ছয় পিরিয়ড আর অন্যান্য শ্রেণিতে সাত পিরিয়ড ক্লাস স্কুলগুলোতে কিভাবে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়ে যান প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তাই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির রুটিনের সঙ্গে সমন্বয় করে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির রুটিনের ছক প্রস্তুত করে দিয়েছে এনসিটিবি। যা প্রকাশ করে ওই ছক অনুসারে অষ্টম-নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস নির্ধারণ করে স্কুলগুলোকে ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
নতুন রুটিন সম্পর্কে জানতে চাইলে শুক্রবার বিকেলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন রুটিন অনুযায়ী ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হবে ছয় পিরিয়ড। আর নবম ও দশম শ্রেণির সাত পিরিয়ড ক্লাস হবে। এভাবেই নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সঙ্গে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস সমন্বয় করে নিতে রুটিনের ছক করে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান শুরুর আগে আমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সাত পিরিয়ডের ক্লাস নির্ধারণ করে রুটিন করে দিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছেন নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের লার্নিং অ্যাক্টিভিটিসের জন্য সময় থাকছে না। তাই সে বিবেচনায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস ছয় পিরিয়ড করে গত এপ্রিল মাসে শেষে রুটিন সংশোধন করা হয়। এরপর শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তমের সঙ্গে সমন্বয় করে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস কিভাবে হবে তা নিয়ে তারা কিছুটা ধোঁয়াশায় আছেন। তাই আমরা নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন রুটিনের সঙ্গে সমন্বয় করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির রুটিনের ছক করে দিয়েছি।
রুটিনের ছক কথাটির ব্যাখ্যায় এনসিটিবি সদস্য আরো বলেন, আমরা অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির পূর্ণাঙ্গ রুটিন করে দেইনি। তবে, কোন শ্রেণিতে কত পিরিয়ড ক্লাস হবে, প্রতি পিরিয়ড কতটুকু সময়ের হবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছি। শিক্ষকরা ছকে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাসের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ রুটিন প্রস্তুত করে ক্লাস চালাবেন।
ছকে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কোন পিরিয়ডে কোন ক্লাস হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। রুটিনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য রুটিনে উল্লেখিত বিষয়গুলো যেভাবে আছে সেভাবেই ক্লাস হবে। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির জন্য রুটিনে উল্লেখিত দিন ও সময়ে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব সুবিধামতো বিষয় স্থাপন করে পূর্ণাঙ্গ রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে রুটিনে ছক অনুসারে সপ্তম পিরিয়ডের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে।
রুটিনে এনসিটিবি আরো জানিয়েছে, এক শিফটের স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে তৃতীয় পিরিয়ড হবে ৬০ মিনিটের আর চতুর্থ থেকে সপ্তম পিরিয়ড হবে ৫০ মিনিটির। আর দুই শিফটের স্কুলে প্রতি শিফটে প্রথম পিরিয়ড হবে ৪৫ মিনিট আর বাকী পিরিয়ডগুলো হবে ৪০ মিনিটের। রুটিনে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কোনো বিষয়ে সেশন সংখ্যা বা ক্রম পরিবর্তন করা যাবে না বলেও জানিয়েছে এনসিটিবি।
রুটিনে আরো বলা হয়েছে, জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন শিখনকালীন কার্যক্রম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় দিবসে সেশন রুটিন অনুসরণ না করে দিবস পালনের কার্যকম পরিচালিত হবে।
শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস পরিচালনার দায়িত্ব দিতে বলেছে এনসিটিবি। বোর্ড বলছে, একটি শ্রেণিতে একজন শিক্ষককেই দায়িত্ব দেয়া যাবে। শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাকে সে বিষয়ে সেশন ও শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।
এদিকে ওই ছক প্রকাশ করে ইতোমধ্যে সে অনুযায়ী ক্লাস নিতে সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলো প্রধানদের বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বিষয়টি নিশ্চিত করে অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী গতাকাল শুক্রবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এনসিটিবির করে দেয়া রুটিনের ছক সব প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওই ছক পাঠিয়ে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সমন্বিত রুটিন অনুসারে ক্লাস নিতে স্কুলগুলোকে বলা হয়েছে।