বেসরকারি নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ৫২ শিক্ষার্থীর ভর্তি অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরের (মাইগ্রেশন) সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ।
পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, অন্য যেসব বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন শূন্য আছে সেসব কলেজে এসব শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেট করতে বলা হয়েছে। আর মাইগ্রেশনের খরচ নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।
তিন মাসের মধ্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (বিজি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নানা অনিয়মের ও অব্যবস্থার অভিযোগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ নভেম্বরে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষা বর্ষে সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজসহ বেসরকারি পাঁচটি মেডিক্যাল -ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পরে এই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে নাইটিংগেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
পরে একই বছরের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধীনে ৫২ জন শিক্ষার্থীকে নাইটিংগেল কলেজে ভর্তি নেওয়া হয়। এরপর নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজে আদালত থেকে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে নেয়।
নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষক, অপারেশন থিয়েটার, হাসপাতালে রোগী না থাকায় চতুর্থ বর্ষে এসেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছিল। নিয়ম অনুযায়ী এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষে এসে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্য না পেয়ে বিএমডিসিতে যোগাযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা জানতে পারেন, ভর্তি স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না।
এরপর ২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষের ৫২ শিক্ষার্থীর মধ্য ৪৫ জন শিক্ষার্থী অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ভর্তি স্থানান্তরের সুযোগ চেয়ে গত বছর আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চেম্বার আদালত হয়ে গত বছরের ৯ নভেম্বর মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।
শুনানির ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত মাসে এসব শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের বিষয়ে আদালতকে জানায়, হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মাইগ্রেট করা সম্ভব না।
এরপর গত ১৬ এপ্রিল নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট প্রত্যাহার করে নেয়।
তারপরও নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের ৪৫ শিক্ষার্থীর মাইগ্রেশনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিনকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাবির মেডিসিন অনুষদের ডিন আদালতে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের বিষয়ে সময় চাইলে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।