দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষক হবেন। কিন্তু পরিবারের চাওয়া ছিল, মেয়ে চিকিৎসক হবে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন, কিন্তু ভর্তি হননি। ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ভালো ফলও করেন, কিন্তু শিক্ষক হিসেবে সুযোগ পাননি। পরে সিদ্ধান্ত নেন গবেষক হওয়ার। কর্মজীবনের শুরুটা হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে (বিআইডিএস)। পরে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেন। পোস্ট-ডক্টরাল সম্পন্ন করেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সেখানে অর্থনীতিবিদ ও জাতিসংঘের নীতি-পরামর্শক অধ্যাপক জেফরি স্যাক্সের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন ও আইসিটি নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয় তার। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনীতিবিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ড. ফাহমিদা খাতুন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে। তাছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো। জাতিসংঘের বাণিজ্য এবং উন্নয়ন কমিটির (আঙ্কটাড) প্রডাক্টিভ ক্যাপাসিটি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্ল্যাকের গভর্নিং বডিরও সদস্য। ইউএনডিপিতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও ইউএসএআইডিতে কাজ করেছেন অর্থনীতিবিদ হিসেবে। ভিজিটিং ফেলো ছিলেন নরওয়ের ক্রিশ্চিয়ান মিকেলসেন ইনস্টিটিউট, ভারতের সেন্টার ফর স্টাডি অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড পলিসিতে ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেডে। তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য গঠিত অর্থনীতিবিদদের প্যানেলেরও সদস্য ছিলেন। বাবার চাকরিসূত্রে ফাহমিদা খাতুনের বেড়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার শিক্ষকদের দেখেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক হতে গেলে শুধু ভালো ফল করলেই হয় না; রাজনৈতিক কিছু বিষয়ও থাকে। এ কারণে ফল থাকলেও আমার শিক্ষক হওয়া হয়নি। তবে এ নিয়ে এখন আর কোনো আক্ষেপ নেই।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বিআইডিএসের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন পড়তেন ফাহমিদা খাতুন। প্রতিষ্ঠানটির লাইব্রেরিতেও যেতেন। দেশের প্রথম সারির গবেষকদের কাজ দেখে গবেষণায়ও তার আগ্রহ জন্মে। এ আগ্রহ থেকেই বিআইডিএসে চাকরি নেন। চাকরিতে যোগ দেয়ার পর নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করতে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান লন্ডনে।
বিআইডিএসে থাকা অবস্থায় ছুটি নিয়ে কিছুদিন ইউএনডিপি ও ইউএসএআইডিতে কাজ করেন ফাহমিদা খাতুন। এরপর আবার বিআইডিএসে ফিরে যান। সিপিডিতে যোগ দেন ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও তিনি পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা খাতবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিবেশবান্ধব পণ্য চিহ্নিতকরণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈদেশিক সাহায্যের কার্যকারিতাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন। সরকারের হয়ে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সভায় প্রতিনিধিত্বও করেন তিনি। কর্মজীবনে নানা চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে
হয়েছে ফাহমিদা খাতুনকে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল মা হওয়ার সময়টা। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, 'মাতৃত্বের সময়টা মেয়েদের জীবনের একটি বিশেষ সময়। আমি ওই সময় আমার কাজ অব্যাহত রেখেছিলাম। কিন্তু অনেক সময় একটা খারাপ লাগা কাজ করত এই ভেবে যে সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি কিনা। তবে পরিবারের সদস্যরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন।