অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর দ্বিপক্ষীয় কোনো সফরে যাননি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে, বহুপাক্ষিক ফোরামে যোগ দিতে বিদেশ সফর করতে রাজি আছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক হতে পারে তার প্রথম সফর। আগামী ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আশা করা হচ্ছে, ওই সময়ে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন যোগ দেবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে দেশের কঠিন সময়ে তার চিরচেনা কর্মস্থলের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে সংক্ষেপে বিভিন্ন দিকনির্দশনাও দেন তৌহিদ হোসেন।
একই দিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনকে কীভাবে ঢেলে সাজানো যায় এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া যায়, সেসব বিষয়ে বার্তা দেন।
পরদিন সোমবার তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। বৈঠকে থাকা একাধিক সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিকরা খুব গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক উপদেষ্টাকে জানান, আগামী ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেবেন, এটি ধরে নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তখন মো. তৌহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেন অধিবেশনে গুরত্বপূর্ণ রোল পান, বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেন।
বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের যুক্তরাষ্ট্র অনুবিভাগ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি সংলাপ আছে। এর মধ্যে গত মে মাসে কিছু সংলাপ হওয়ার কথা ছিল। আগস্টেও একটা সংলাপ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সাময়িকভাবে তা বাতিল হয়ে গেছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা, অংশীদারত্ব নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। এগুলো এগিয়ে নেব কি না? উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আলাপ-আলোচনা আমরা চালিয়ে যাব। কিন্তু সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যেতে পারব কি না, সেটি এখনই বলা যাবে না। পরে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর নিয়ে রোববার সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, কোনো দ্বিপক্ষীয় সফর এই মুহূর্তে পরিকল্পনার মধ্যে নেই। বহুপক্ষীয় যেগুলো হবে এবং যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন হবে সেখানে যাবেন। দ্বিপক্ষীয় আরও পরে, বেশ পরে; আমরা ঠিক করব।
তিনি বলেন, অন্তত পরবর্তী মাস পর্যন্ত হবে না। সেপ্টেম্বরে তো অবশ্যই না, অক্টোবর নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সফর হবে, দেশ স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে এলে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।